মহীয়সী নারী রাণী রাসমণির জীবন কথা - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

মহীয়সী নারী রাণী রাসমণির জীবন কথা




রাণী রাসমণি ছিলেন এক মহিয়সী নারী ৷ গরিবের ঘরে জষ্ম হলেও এক জমিদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়৷ ফলে    তিনি সত্য সত্যই রানীর পদে অধিষ্ঠিত হন৷ কিন্তু রানী হলে কি হবে? তিনি কখনও বিলাসী জীবন যাপন করেন নি৷ আজীবন ধর্ম চর্চা ও জনকল্যানমূলক কাজ করে গেছেন৷ এই জন্য তিনি চিরসষ্মরনীয় হয়ে আছেন৷ ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে  রাণী রাসমনি কলকাতার উত্তরে গঙ্গার পূর্বতীরে হালিশহরের নিকট কোনা নামক গ্রামে  জষ্মগ্রহন করেন৷ পিতার নাম হরেকৃষ্ণ দাস ৷মাতার নাম রামপ্রিয়া দাসী৷ হরেকৃষ্ণ দাসের পেশা ছিল গৃহনির্মান ও কৃষিকা৷জষ্মের পর মা রামপ্রিয়া মেয়ের নাম রাখেন রাণী৷পরে তার নাম হয় রাসমনী৷ আরো পরে দুটি নাম একত্রিত হয়ে প্রতিবেশিদের কাছে তিনি রাসমনী নামে পরিচিত হন৷ ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্ধে জমিদার রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে তার বিয়ে  হয় ৷তাদের চার কন্যা--পদ্মামনি,কুমারি,করুণা এবং জগদম্বা৷

রাজচন্দ্র ছিলেন অত্যন্ত কর্ম কুশল৷ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন বুদ্ধিমতি স্ত্রী রাণী রাসমনি৷ কিন্তু ব্যবহারে তিনি ছিলেণ অত্যন্ত অমায়িক৷ এর ফলে তার সাফল্য আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে৷৷পিতার মৃত্যুর পর রাজচন্দ্র বিশাল সম্পদের অধিকারি হন৷

রাজচন্দ্র ছিলেন উদার প্রকৃতির মানুষ৷ সেই সঙ্গে  যুক্ত হয়েছিল স্ত্রী রাসমনীর অনুপ্রেরণা৷ ফলে এই জমিদার পরিবার জনকল্যাণের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন৷ ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে  বন্যায় বাংলার অনেক পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে৷ রাণী রাসমনি তাদের সহয়তার জন্য বহু অর্থ ব্যয়করেন৷ ঐ বছরই রাণী রাসমনির পিতা পরলোক গমন করেন৷ রাসমণি কন্যার কর্তব্য অনুসারে  পিতার পরলৌকিক ক্রিয়া করার জন্য গঙ্গার ঘাটে যান৷

কিন্তু যাতায়াতের রাস্তা এবং গঙ্গা অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়৷ তাই জনগনের সুবিধার কথা চিন্তা করে রাণী স্বামীকে অনুরোধ করেন সংস্কারের জন্য ৷ রাজচণ্দ্র বহু টাকা খরচ করে বাবু ঘাট  ও বাবু রোড নির্মান করেন৷

রাজচন্দ্র ও রাসমণির দাম্পত্য জীবন খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয় নি ৷ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে রাজচন্দ্র ইহলোক ত্যাগ করেন৷ এর ফলে জমিদারির সমস্ত দায়িত্ব  পড়ে রানী রাসমনির উপর৷৷ কিন্তু জমিদারির পাশাপাশি তিনি জনকল্যান ও ধর্মচর্চা সমানভাবে করে গেছেন৷ ১৮৩৮ সালে রাণী রাসমনী ১,২২,১১৫ টাকা খরচ করে একটি রথ তৈরি করেন৷ তাতে জগন্নাথ দেবকে বসিয়ে রথযাত্রার দিন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে  কোলকাতার রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করেন৷

একবার তিনি পূন্যভূমি জগন্নাথ ক্ষেত্রে যান৷ সেখানকার রাস্তাঘাট ছিলো জরাজীর্ণ ৷তীর্থযাত্রিদের খুব কষ্ট হতো হতো চলাফেরা করতে৷ রাসমণি তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সমস্ত রাস্তা সংস্কার করে দেন৷শুধু তাই নয় ষাট হাজার টাকা ব্যয় করে তিনি জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা এই তিন বিগ্রহের জন্য  হীরক খচিত তিনটি মুকুটও  তৈরি করে দেন৷  রাণী তার প্রজাদের সন্তানের ন্যায় পালন করতেন৷   একবার এক নীলকের সাহেব  মকিমপুর পরগণায় প্রজাদের ওপর উৎপীড়ন শুরু করেন৷ এ কথা রানী শুনতে পান এবং তার হস্তক্ষেপে  তা বন্ধ হয়৷ তিনি প্রজাদের উন্নতিকল্পে  এক লক্ষ টাকা খরচ করে টোনার খাল খনন করেন৷  এর ফলে মধুমতী  নদীর সঙ্গে নব গঙ্গার  সংযোগ সাধিত হয় ৷এছাড়া   সোনাই বেলিয়াঘাটা  ও ভবানীপুরে  বাজার স্থাপন এবং কালীঘাট নির্মান  তার  অনন্য কীর্তি৷

রানী রাসমনির জীবনী থেকে আমরা এই নীতিশিক্ষা লাভ করতে পারি যে মানুষের জষ্মের চেয়ে তার কর্মই বড়৷ জষ্ম যেখানেই হোক না কেন কর্মের দ্বারা মানুষ চিরস্মরনীয়  হয়ে থাকতে পারে৷ এটাই প্রত্যেক এর জীবনের  লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ সম্পদকে মানুষের সেবায় লাগাতে হবে৷ শুধু নিজের সুখ নই   অপরের সুখের জন্যও  সম্পদ ও ক্ষমতার ব্যবহার  করতে হবে৷ এভাবে ধর্মচর্চা ও জনসেবায় আত্ননিয়োগ করতে পারলে জীবন  সার্থক হয়৷

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।