ভক্তি ও শ্রদ্ধা একটি নৈতিক গুণ ৷ এবং তা ধর্মেরও অঙ্গ ৷ যারা আমাদের গুরুজন তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি৷ আর গুরুজনেরা আমাদের স্নেহ করেন৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে বড়দের প্রতি ছোটদের যে শিষ্টাচার তাকে বলে শ্রদ্ধা ৷ ছোটদের প্রতি বড়দের যে মমতামাখা আচরণ , তার নাম স্নেহ৷শ্রদ্ধা ও ভক্তি সমার্থক৷ তবে ব্যবহারে র ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য আছে৷ ভক্তি হচ্ছে ভক্তির পাত্রের প্রতি চরম অনুরাগ ৷শ্রদ্ধা যখন গভীর হয় তখন তাকে বলে ভক্তি৷ আমরা ঈশ্বরকে ভক্তি করি৷ কারণ তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন৷ তিনি আমাদের পালন করেন ৷ তিনি নানাভাবে আমাদের মঙ্গল করেন৷ ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দুভাবে প্রকাশ করা যায়৷ ১--সরাসরি ঈশ্বরের নাম জপ ,নাম কীর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে৷ ২-- আমাদের মাবাবা শিক্ষকসহ গুরুজনদের ভক্তি করার মধ্য দিয়ে ৷ আমরা দেব দেবীর দের বিশেষ ও শক্তি অর্জনের জন্যে তাদের ভক্তি করি৷পূজার মধ্য দিয়ে দেবতাদের প্রতি আমাদের ভক্তি প্রকাশ পায় ৷
আমরা জানি , ঈশ্বর যখন ভক্তকে কৃপা করেন, তখন তাকে ভগবান বলে৷ ভক্ত যেমন ভগবানকে ভক্তি করে তেমনি ভগবানও ভক্তকে দেখে রাখেন৷তাই তো বলা হয় ভক্তের ভগবান কিংবা ভক্তের বোঝা ভগবান বহন করেন৷ভক্ত সুখ ও দুঃখকে একইভাবে গ্রহন করে ৷কর্মের ফলের দিকে না তাকিয়ে কেবল কর্তব্য কর্ম করে যান৷ তিনি সহিষ্ণু পরদুঃখকাতর ৷ পরের সুখে সুখী হন৷ অন্যের দুঃখে দুঃখী হন৷ কেউ তার পর নয়৷ সকল মানুষকে তিনি আপন মনে করেন৷
তিনি নিজেও তার সকল ঈশ্বরের নিকট সমর্পন করেন৷ অথ্যাৎ তার সকল কাজ ঈশ্বরের কাজ ৷ তিনি শুধু কাজটি সম্পাদন করছেন৷ ভক্তের এই ফলের আশা না করে কর্তব্য পালন করে যাওয়া সুখ ও দুঃখকে সমানভাবে গ্রহন না করা ,পরোপকার সহিষ্ণুতা অহিংসা প্রভৃতি নৈতিক গুণগুলো যে মূল্যবোধ সৃষ্টি করে তা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য খুবই প্রয়োজন৷ ভক্তিতে ব্যক্তির মুক্তি আর সমাজের মঙ্গল৷
আমরা আমাদের পরিবারে ও সমাজে নানা রকমের কাজ করি৷ আমাদের মধ্যে যারা শিক্ষার্থী তাদের কাজ কী? এর উত্তর হবে -ভালো করে লেখাপড়া করা আর জ্ঞান অর্জন করা ৷ যারা চাকরি করেন তাদের নিজেদের কাজ যত্নের সঙ্গে করতে হয়৷ সমাজেও মানুষকে নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করতে হয়৷ সে কর্তব্য পালনে কেউ অবহেলা করলে গোটা সমাজেরই ক্ষতি হয়৷ আমরা নিশ্চয় লেভেলক্রসিং দেখেছি ৷রেল লাইন আর সড়ক যেখানে একে অন্যকে ভেদ করে চলে গেছে৷ সেই জায়গাটাকে বলে লেভেলক্রসিং৷ ট্রেন আসার আগেই ঠিক সময় রেল লাইন ভেদ করে যাওয়া সড়কটি দুপাশ থেকে প্রতিবন্ধক দন্ড ফেলে বন্ধ করে দিতে হয়৷ তা হলে কী হবে?সড়ক দিয়ে গাড়ি চলতে থাকবে ,লোকজন চলতে থাকবে৷ ট্রেনও এসে পড়বে ৷তাতে ঘটবে দুর্ঘটনা ৷লেভেলক্রসিং এ প্রতিবন্ধকতা ফেলার এবং ওঠানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর কর্তব্যনিষ্ঠার ওপর যানবহন ও জনগনের চলাচলের নিরপত্তা নির্ভর করে ৷
একথা জীবন ও সমাজের সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷ সুতরাং আমরা কর্তব্যনিষ্ঠার আদর্শ অনুসরন করে চলবো৷এর দ্বারা আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তি জীবন সুন্দর হবে এবং সমাজে থাকবে শৃঙ্গলা ও শান্তি ৷ জীবন ও সমাজ হবে আনন্দময়৷ আরুণির কর্তব্য নিষ্ঠার উপখ্যানটি আমরা সবাই পড়েছি ৷সেই যে ধৌম্যের শিষ্য আরুণি৷ তিনি গুরুর আদেশ পালন করতে গিয়ে ক্ষেতের আল বেঁধে বর্ষার জল আটকিয়েছেন৷ কিন্তু জল আটকানোর জন্য আল বাঁধতে না পেরে নিজেই আল হয়ে ক্ষেতের পাশে শুয়েছিলেন৷আরুণির এ কর্তব্য নিষ্ঠার উপখ্যান ধর্মগ্রন্থে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে৷ আর আমাদের যেন ডেকে বলছে তোমরাও আরুণির মতো কর্তব্যনিষ্ঠ হও
No comments:
Post a Comment