নড়াইলের বিভিন্ন বিলে নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ও কৃষকদের ফসলি জমি নষ্ট, জবরদখল গড়ে উঠছে মাছের ঘের!!! - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

নড়াইলের বিভিন্ন বিলে নিরীহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ও কৃষকদের ফসলি জমি নষ্ট, জবরদখল গড়ে উঠছে মাছের ঘের!!!


উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি,নড়াইলের বিভিন্ন বিলে ফসলি জমি এবং মাছের অভয়াশ্রমকে নষ্ট করে নাম মাত্র অর্থে লিজ নিয়ে বা জ*বরদখ*ল করে মাছের ঘের করার হি*ড়িক পড়েছে। এমনভাবে ঘের কাটা হচ্ছে যে এক পর্যায়ে জমির মালিক জমি বিক্রি করতে বা লিজ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

জেলার প্রায় সমস্ত বিলে এভাবে অসংখ্য বড় বড় মাছের ঘের গড়ে উঠলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। আর জনপ্রতিনিধিরাও এর প্রতিকারে এগিয়ে আসছেন না। এ বছর সদরের কামাল প্রতাপ গ্রামে স্থানীয় কোন্দলকে পুঁজি করে নিরীহ কৃষক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের শতাধিক একর জমিতে প্রায় ৩০টি মাছের ঘের কাটার অভিযোগ উঠেছে। এ অপ*রাধমূলক কাজের প্রতিকার চেয়ে ভূ*ক্তভো*গিরা জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি  জানান, লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের কামাল প্রতাপ গ্রামের এনায়েত কাজী প্রায় ১৫ একর, পার্শ্ববর্তী লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের কামরুল খান ৪০ একর এবং কামঠানা গ্রামের মিন্টু মিয়া আ*ন্ধারকোটা বিলে ৬০ একর জমির ওপর অপরিকল্পিতভাবে এবং জ*বরদখ*ল করে মাছের ঘের কেটেছে। কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে এবং ভ*য়ে নামমাত্র চুক্তিতে তাদের প্রিয় জমি ছা*ড়তে বাধ্য হয়েছে।

আবার মাছের ঘের কাটায় অনেক জমির মালিকের জমিতে যাবার পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামবাসী জানান, কামাল প্রতাপ গ্রামে দু’টি হ*ত্যাকান্ডের পর এখন দু’পক্ষই গ্রাম ছাড়া। এই সুযোগে অ*বৈধভাবে একাধিক মাছের ঘের তৈরী করছে। আগামিতে এ ঘেরকে কেন্দ্র করে আবার খুনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আ*শং*কা প্রকাশ করেন।

কামাল প্রতাপ গ্রামের সত্যরঞ্জন মালাকার বলেন, আমার ১ একর ১৪ শতক জমিতে আমন ধান ও তিল আবাদ করা ছিলো যা আমার পরিবারের সারা বছরের খাদ্যের যোগান হয়। সেই ফসল নষ্ট করে কামরুল খান মাছের ঘের কেটেছে।

ভক্তদাস বিশ্বাস বলেন, আমার ৭৮শতক জমিতে মিন্টু মিয়া জোরপূর্বক মাছের ঘের কে*টেছে। সিদ্দিক মল্লিক বলেন, মামলা জনিত কারণে আমি এলাকায় না থাকায় কামরুল ও এনায়েত আমার ১ একর ৩৫ শতক ফসলি জমিতে জো*র করে ঘের কেটেছে।

এছাড়া একই গ্রামের বাসিন্দা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ফায়েকুজ্জামান ফিরোজের ৪২ শতক, দুলাল বিশ্বাসের ৯০ শতক, শক্তিপদ বিশ্বসের ৭৮শতক, শান্তিরাম বিশ্বাসের ১একর ২৬শতক, প্রশান্ত বিশ্বাসের ৬০ শতক, সুশীল মন্ডলের ১২ শতক, সৈয়দ রানার ৭৫ শতক এবং সৈয়দ নায়েব আলীর ১একর জমি জবর দখল করে কামরুল, এনায়েত ও মিন্টু মাছের ঘের কে*টেছে।

ওই গ্রামের জয় বিশ্বাস বলেন, কামরুল খান এমনভাবে ঘের কে*টেছে তাতে তাদের পৈত্রিক ৩৫ শতক জমিতে যাওয়ার কোনো পথ নেই। একই কথা বলেন, খায়ের মল্লিক ও আমাজাদ কাজী। তারা জানান, মিন্টু মিয়ার প্রায় ৫০ একর ঘেরের মধ্য খানে তাদের দুজনের ১ একর ৩৫শতক জমি রয়ে গেছে। জমিতে যাওয়ার কোনো পথ নেই। প্রতিবা*দ করলে হ*ত্যাসহ বিভিন্ন প্রকার হু*মকি দেওয়া হচ্ছে।

জমি জবরদখলের ব্যাপারে অভিযোগ অস্বীকার করে এনায়েত কাজী বলেন, আমি না এসব জবরদখ*ল করে কামরুল এবং মিন্টু ঘের কেটেছে। তার অধিকাংশ জমির মালিকদের কাছ থেকে না শুনে ও চুক্তি না কওে ঘের কে*টেছে।

কামাল প্রতাপ গ্রামের বাসিন্দা হুগলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিরন্ময় বিশ্বাস বলেন, এ বিলে অনেক জমির মালিকের কাছ থেকে জোর করে অথবা কৌশলে ফেলে লিজ নেওয়া হয়েছে। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা অসংখ্য মাছের ঘেরের কারণে বিলের পানি ঠিক মতো বের হতে পারে না। ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে ফলনও কমে গেছে। এছাড়া দেশী মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে।

লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আররাফ হোসেন বলেন, ওই এলাকার কামরুল খান, সবুজ, পলাশ, মিন্টু মিয়াসহ অনেকে প্রায় ১ হাজার একর ফসলি জমিতে হাজরাখালি লাইনের খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করেছে। মাছের অভয়াশ্রম বলে খ্যাত এসব বিলের দেশী মাছ এক সময় সারা জেলার মানুষের চাহিদা মিটত। এখন এসব বিলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করায় একদিকে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে অন্যদিকে দেশী মাছের বিলু*প্তি হচ্ছে।

সদরের নুনীক্ষীর, সাতঘোরিয়া, বড়েন্দার, গোবরা ও কাড়ার বিলের প্রায় ১৫শ একর জমিতে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করা হয়েছে। ফলে বর্ষাকালে এসব বিলের পানি সময় মতো বের হতে পারে না এবং প্রয়োজনের সময় এসব বিলে পানি প্রবেশ করতে পারে না।

কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, এভাবে অ*পরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করলে জলাব্ধতার সৃষ্টি হবে এবং ফসলি জমি কমে যাবে। কৃষকের চাষের জমিতে জো*র করে মাছের ঘের করার অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।

জেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ ফারুকুল ইসলাম বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এবং প্রাকৃতিক মাছের অভয়াশ্রম ন*ষ্ট করে ঘের করার সুযোগ নেই। অ*পরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের করলে দেশী মাছের আঁধার বলে পরিচিত এসব বিলের প্রাকৃতিক মৎস সম্পদ ন*ষ্ট হবে।

নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার) জানান, এ ধরণের একটি অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস জানিয়েছেন এবং লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান। জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এ ধরনের মাছের ঘের করা যাবে না। বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।