মানুষ মুক্ত হওয়ায় সাজাপ্রাপ্ত, মানুষ নিজেকে নিজে সৃষ্টি করে নাই তারপরও এই পৃথিবীতে চলে আসার পর মানুষ তার প্রতিটি কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। আমরা মুক্ত মানুষ এবং স্বাধীনতা সারা জীবন ধরেই বেছে নেওয়ার শাস্তি দিয়েছে।
ফারাসী দার্শনিক জাঁ পলর্সাত্রে মানুষের মুক্ত হওয়া স্বাধীন হওয়ার কারনে কিছু কিছু ভুল যে মানব জাতিকে সাজা দেয় সেটাই উপল্বদ্ধি করেছেন।
মানুষসহ পৃথিবীতে ৮৭ লাখ প্রজাতি জীবের অস্তিত্ব, প্রাণী, উদ্ভিদ পরিবেশ বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। সমুদ্র, পাহাড়, নদী, বায়ু এইসব কিছু নিয়ে আমাদের প্রকৃতি জগত। মানবজাতির অস্তিত্বই সকল কিছুর উপর আমাদের অধিকার দিয়েছে। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানে আমাদের অস্তিত্ব আর শ্রেষ্ঠত্ব।
প্রকৃতিই জীবন, প্রকৃতি ছাড়া জীবন কল্পনাও করা যায় না। সেই প্রকৃতি-যে প্রকৃতিই জীবন সেই প্রকৃতিকে আমরা নানাভাবে হুমকির মুখে ফেলি, মানুষ মুক্ত-স্বাধীন। তাইবলে অন্যের জগতে আমাদের অন-অধিকার প্রবেশ কে দিয়েছে?
রোজীনা রাখী লিখেছেন- সাগরের সলিল শুভ্র ফেনায় আজ বিষাক্ত দানবের হুংকার। সবুজ কচি পাতার আড়াল ভেঙ্গে গাছেদের বুকে ধারালো করাত বসিয়ে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে মানুষ আমরা হয়ে উঠি বনিক বাদশা। মৃত্তিকার মেঠো গন্ধে ভরে উঠে মন। বৃষ্টিস্নাত ধুলায় উবে যায় যাবতীয় গ্লানি। অথচ নিয়মের অবাধ্য হয়ে সেই মাটির উপর গড়ি বিশালাকার সব অট্টালিকা। আর এক শ্রেনীর মানুষকে পিঁপড়ার মত পিষে মারি পায়ের তলায়। যে মাটি থেকে জন্ম আবার ফিরে যাওয়া সেই মাটিকেই করি নিতান্ত তুচ্ছতাচ্ছিল্য।
বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী আর্সেনসের বলেছিলেন পাশ্চাত্য সভ্যতা মূলত ভুল পথে হাঁটছে। আমাদের সভ্যতা প্রকৃতিকে অসন্তোষ করছে। প্রকৃতি তাই মাঝে মাঝে চোখ রাঙ্গানী দেয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিয়ে।
পৃথিবী নামক যে সজীব গ্রহটিতে আমরা বাসকরি তার কিন্তু একটা সহ্যসীমা অবশ্যই আছে। মাত্রা অতিরিক্ত অত্যাচার নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে না পেরে, আর প্রকৃতিতে অন-অধিকার প্রবেশের ফলে প্রকৃতি ক্রোধ দেখাচ্ছে, করোনা নামক প্রাণঘাতী ভাইরাস দিয়ে। প্রকৃতির এই ক্রোধ আমাদের পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের সবার উপরে।
উন্নত বিশ্ব প্রকৃতিকে গলা টিপে ধরছে, নানা প্রকার আবিষ্কারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আবিষ্কার করছে। আমরা কারখানার বর্জ্য থেকে গাড়ীর ধোঁয়া এমনকি বাড়ীর ময়লাটুকু অসচেতনভাবে রেখে প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ফেলি। ছোটখাট দূষন প্রকৃতি মেনে নেয় কিন্তু যখন মানবভ্রুণ কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করতে চায় বিজ্ঞানীরা, আর তখন কিন্তু সীমার মধ্যে থাকে না জ্ঞান চর্চা।
স্বাভাবিক নিয়মের জালে বিলুপ্ত হয়েছেন যারা হাজার হাজার বছর আগে, তাদের পূর্ণজন্ম দিতে কৃত্রিমভাবে বিজ্ঞান গবেষণা করে তখন কিন্তু সেটা প্রকৃতির অনধিকার প্রবেশ।
বন্য প্রানী বনে সুন্দর তাদেরকে মানুষ বাজারে এনে বেঁচা-কেনা কেন করতে হবে? বাজারে গৃহপালিত পশু পাখির হাট আছে যেটা আমাদের জন্য বৈধ। বন্য প্রানীদের প্রকৃতির বুকেই নিরাপদ। এমনটা করলে বন্যপ্রানীর দেহে ভয়ংকর ভাইরাসের মত জীবানু থাকে যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করবেই। আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
চীনে কোভিড-১৯ করোনা প্রার্দুভাব প্রথম শুরু হয়। অথচ সেই চীনের একজন মহান শাসক ছিলেন শনেনন্দ্র। যিনি মাঠে কৃষকদের সাথে কাজ করতেন এবং চীনের কৃষিতে তিনি বিপ্লব এনেছিলেন। শনেনন্ড সব উদ্ভিদ খেয়ে দেখেছিলেন কোনটা মানুষের জন্য সহজপ্রাপ্য। যার জন্য শনেনন্ড ৭০ বার বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
মানব-জাতির কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে আমরা মুক্ত ও স্বাধীন হওয়ার জন্য বিধি নিষেধ অমান্য করে অন্যের জগতে প্রবেশকরি। মানুষের সূচনা আদি ইতিহাস বলে মানুষ ছিলো গুহাবাসী। বন্য জীবন ছিলো তারা উলঙ্গ ছিলো, শিকার ছিলো মানুষের একমাত্র খাদ্য।
আনুমানিক দশ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজ পুরোপুরি রপ্ত করে। রাহুল সাংকৃতিয়্যান তার ভোলগা থেকে গঙ্গা রচনাতে মানুষের আদি জীবনে বিপদ সংকূলান বর্ননা দিয়েছে। মানুষ শিকার করতো খাদ্যের জন্য আবার হারহামেশা হিংস্র বন্যপ্রাণীর শিকারে নিজেরা পরিণত হত।
ডারউইন তার 'অরজিন অব স্পাইসিস' গ্রন্থে বিষদ বর্ণনা দিয়েছেন তাতে দেখা যায় ডাইনসোর থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল প্রাণীদের সাথে যুদ্ধ করে মানুষের টিকে থাকার ইতিহাস। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে যা দিয়েছেন তা হলো জ্ঞান। এই জ্ঞান দিয়ে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করছে। কৃষি বিপ্লবের পর শিল্প বিল্পব থেকে আধুনিক সভ্যতা মাঝখানে মধ্যযুগ এর অন্ধকার যাযাবর জীবন পরে রেঁনেসা।
লম্বা লম্বা সময় নিয়ে মানুষ আজ সভ্যতার চরম প্রান্তে। গুহা থেকে এ্যার্পাটমেন্ট করেছে মানুষ। পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বে এখন মানুষ। চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখে নীল আর্মস্ট্রং। তিনি বলেছিলেন ব্যক্তির জন্য একটি পদক্ষেপ মানব জাতির জন্য এটি কল্যাণকর।
মানুষ এখন লাফ দিয়ে মহাবিশ্বের বিশালত্বে কর্তৃত্ব করতে চায়। মহাবিশ্ব, বর্ষ, মাস, দিন, ঘন্টা ও মিনিট আলোক দিয়ে মাপা হয়। ১ আলোক বর্ষ সমান ১০,০০০ কোটি কিলোমিটার। আমাদের সূর্য ছায়া পথের ৪০০ বিলিয়ন গ্যালক্সির একটি তারা। আবার নীহারিকা পুরো গ্যালাক্সী ৯০,০০০ আলোকবর্ষ চওড়া। মহাবিশ্বের এগুলোতো একবারে প্রাথমিক তথ্য। বলা হয়, মানুষ মাহবিশ্বের রহস্য জানতে পথে মাত্র পা রেখেছে।
টলিমির ধারনা অনুযায়ী পৃথিবী সব গ্রহের কেন্দ্রেস্থল এমন ধারনা মানুষ ১৪শত বছর আঁকড়ে ছিল। পোলেন্ডের নিকোলাস কোপার্নিকাস খালি চোখে আবিষ্কার করেছিলো পৃথিবীর সূর্য হলো কেন্দ্রস্থল। যার জন্ম ১৪৭৩ সাল, ইতালির পিসো শহরে জন্মগ্রহণ করা গ্যালিলিও দুরবীক্ষন যন্ত্র আবিষ্কার করে কোপানিকার্সের তথ্যর ভিত্তি দিয়েছিলেন। দুজন বিজ্ঞানীকেই মানুষ তার মুক্ত ও স্বাধীনতা দিয়ে সাজা দিয়েছিলো। গ্যালিলিওকে গৃহবন্দি করে এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ।
কাল র্মাক্স যিনি সমাজতন্ত্রের জনক। র্মাক্সকে করুণ জীবন-যাপন করতে হয়েছে। দ্ররিদ্রতার কারনে র্মাক্স এর তিন শিশু সন্তান বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। স্ত্রী-জেনী এক সময় মানসিক ভারসাম্য হারায়। অথচ একসময় পুরো দুনিয়া সমাজতন্ত্রের অধীনে চলে এসেছিলো। মানুষ তার মুক্ত স্বাধীনতার বলে র্মাক্স এর জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিলো।
"
মানুষ তার মেধা-জ্ঞান দিয়ে ইচ্ছে করলে প্রকৃতি এবং পৃথিবী সাজাতে পারে এবং কল্যাণ ও শান্তিময় করতে পারে। কিন্তু তা না করে মানুষ উল্টো পথে হাঁটছে। গ্রীন হাউজ গ্যাস, কার্বন নির্গমণ, পারমানবিক চুল্লী, পারমানবিক অস্ত্র, জীবানু অস্ত্রসহ মারণ অস্ত্রের প্লান্ট তৈরি করতেও পিছপা হচ্ছে না। তাতেই প্রকৃতি ক্ষুব্দ হচ্ছে।
তাই পৃথিবীতে করোনার মত ভাইরাসের জন্ম নিচ্ছে। যাতে বির্বণ এখন পৃথিবী, রকেট থেকে সাবমেরিন, নৌকা থেকে ঠেলাগাড়ীর চাকা বন্ধ, শক্তিধর-দরিদ্র সবাই এখন এক কাতারে, চির চেনা রূপ হারাচ্ছে পৃথিবী। অসহায় সব মানবজাতি, যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা আর নেই, নেই বোমার আতংক, রাজনীতি- কুটচাল আজ চার দেয়াল বন্ধী। প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধপরায়ণ হয় না, যেমনটা মানুষ হয়। প্রকৃতি কখনো অভিসম্পাত হয় না, মানুষ যেমন করে। প্রকৃতি কখনো লোভী হয় না, মানুষ যেমন হয়। প্রকৃতি হয় শান্ত-স্নিগ্ধ- অকৃত্রিম। ইংরেজীতে একটি কথা আছে ‘ন্যাচার অব রিভেঞ্জ’। আমি আগেই বলেছিলাম প্রকৃতি কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয় না। কিন্তু তা কত দিন?
হেলাল হাফিজ লিখেছিলেন বোকা উদ্ভিদ বোঝেনা মানুষের কাছে প্রেম চেয়েছিলো, হয়তো চেয়েছিল বেশি কিছু। মানুষকে প্রকৃতিকে ভালবাসতে হবে, প্রকৃতিকে ভালবাসা মানে নিজেকে ভালবাসা কারন প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, প্রকৃতি না বাঁচলে মানুষ বাঁচবেনা। মানুষের উচিৎ মানুষের জন্য কল্যান করা, মানুষের সমৃদ্ধির পথে নিজের জ্ঞান, বিজ্ঞানকে পরিচালিত করা। মানষ মানুষকে হত্যা করার মারণাস্ত্র, জীবানু অস্ত্র, পরমানু অস্ত্র আবিষ্কারের পথ থেকে সরে আসা, মুক্ত স্বাধীন হওয়ার কারনে সীমা অতিক্রম না করা নিজেকে মহা শক্তিধরে রূপান্তর না করা, নিজে নিজেকে প্রকৃতি ও পৃথিবীর প্রভু মনে করা হতে সরে আসা। যদি প্রকৃতিকে ভালবাসা না দিয়ে আঘাত করি তাবে অভিমানী প্রকৃতি হানা দেবে মরনব্যাধী কোভিড-১৯ হয়ে। কত রকম রোগ-শোক প্রকৃতি তার বুকপেতে আগলে রাখে এই মানব সভ্যতার জন্য। তাইতো প্রকৃতির জন্য শুধু ভালবাসা কাম্য আর কিছু নয়।
প্রকৃতি কি অভিমান করেছে নাকি প্রতিশোধ নিচ্ছে, জুয়েল আইচ অর্ক।
No comments:
Post a Comment