কল্যান কুমার চন্দ .এইস, এস,সি ও এম,বি,বিএস পাসের জাল সনদপত্র দিয়ে বছরের পর বছর ধরে ভুয়া এম,বি,এস ডাক্তার সেজে অসহায়, হতদরিদ্র রোগীদের সাথে প্রতারনার মাধ্যমে অপচিকিৎসা দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম সাতলা গ্রামের মৃত আদম আলী সরদারের ছেলে ভন্ড প্রতারক মোঃ রেজাউল করিম।কখনো সে এম,বি,বিএস ডাক্তার,কখনো সে সাংবাদিক, কখনো সে টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক আবার কখনো সে ঢাকা ও বরিশাল শহর থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার মালিক প্রকাশক হিসাবেও পরিচয় দিয়ে স্বার্থ হাসিল করে নিচ্ছে ।
ভুয়া এম,বি,বি,এস ডাক্তার মোঃ রেজাউল করিমের অপচিকিৎসার স্বীকার ও স্বজন হারানোদের অভিযোগে এবং একাধিক অনুসন্ধানে জানা গেছে উজিরপুর উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত ও কোটালীপাড়া উপজেলার পুর্ব দক্ষিন সীমান্ত ঘেসা পশ্চিম সাতলা গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে "মায়ের দোয়া ক্লিনিক এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনষ্টিক সেন্টার " যেখানে বছরের পর বছর ধরে চলছে গ্রাম গঞ্জের সাধারন রোগীদের দালালের মাধ্যমে এখানে এনে অপচিকিৎসা দেওয়ার নানান কৌশল। তাদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা। অনুমোদনহীন এই ক্লিনিকে মোঃ রেজাউল করিম রোগীদেরকে ভর্তি করে চিকিৎসা ব্যায় বাবদ এক একজন রোগীর থেকে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। হিসাব করে দেখা গেছে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা আয় হয় এই ক্লিনিকে। এসব অবৈধ আয়ের সে কোন আয়কর দেয় না। আয়কর ফাঁকি দিয়ে অথবা আয়কর বিভাগকে ম্যানেজ করেই সে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে প্রতারক রেজাউল।এই ক্লিনিকে রোগীদের ভর্তির পরে চিকিৎসা প্রদান বা জটিল অপারেশনের কোন কেস ডায়রী লিপিবদ্ধ করে তার প্রমান রাখা হয় না।সেই সাথে রোগীদেরকেও কোন প্রমানপত্র দেওয়া হয় না,যা আইনত দন্ডনিয় অপরাধ।
পিরোজপুরের নাজিরপুর,পদ্মডুবি,তরুর বাজার, স্বরুপকাঠী,ইলুহার,গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া,টুঙ্গিপাড়া, উপজেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী এনে ভর্তি করানো হয় মায়ের দোয়া ক্লিনিকে। তারপরেই শুরু হয় রোগীদেরকে তার অপচিকিৎসা দেওয়ার পালা। মোঃ রেজাউল করিমের অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে বিভিন্ন সময় যাদের জীবনহানি ঘটেছে বা ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছেন, তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে রেজাউলের নামে মামলা করা হলেও দোর্দন্ড প্রভাবশালী রেজাউল সেসব মামলা থেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নিজেকে মুক্ত করে নিয়েছে একাধিকবার।
ঘটনা অনুসন্ধ্যানে গিয়ে জানা যায় বানারীপাড়া উপজেলার ইলুহার গ্রামের দিনমজুর মোঃ ফোরকান মিয়া তার ৬ বছরের শিশুপূত্র মোঃ হাসানের বাথরুমের রাস্তায় সমস্যা দেখা দিলে সে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে এবং ছোট ছোট ট্রলার লঞ্চে সর্বরোগে পারদর্শি ডাঃ মোঃ রেজাউল করিমের চোখ ঝলকানো সাইনবোর্ড দেখে বিগত ২৩ জুন শিশু হাসানকে নিয়ে রেজাউল করিমের মায়ের দোয়া ক্লিনিকে গেলে ১৮ হাজার টাকার চুক্তিতে রেজাউল করিম হাসানকে চিকিৎসা করাতে রাজি হয় এবং তার ক্লিনিকের দোতলায় নিয়ে হাসানের পায়ুপথে ছুরি ও এসিড জাতিয় পদার্থ দিয়ে অপারেশনে অদক্ষ রেজাউল কাটাছেরা করতে থাকে। এতে অবুঝ শিশু হাসান চিরতরে তার পায়ুপথের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে এবং জীবন মৃত্যুর সন্দিক্ষনে চলে যায়। এ অবস্থায় হাসানের দরিদ্র পিতা সহায় সম্বল হারিয়ে হাসানকে নিয়ে ঢাকায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং তার পেট কেটে বিকল্প উপায় পায়ুপথ তৈরী করতে হয়। এ ঘটনার পরে হাসানের পিতা মোঃ ফোরকান মিয়া ভুয়া এম, বি,বি,এস ডাক্তার মোঃ রেজাউল করিমের নামে বরিশালের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে সি আর ১৯৩/২০১৯ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য বিজ্ঞ আদালত উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তদন্তের ভার দিলে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাঃ শওকত আলী ও ডাঃ মোঃ মাকসুদুর রহমান যৌথ ভাবে তদন্ত প্রতবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, মোঃ রেজাউল করিম " পিচব্লেন্ড ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি হাসপাতাল" থেকে এম,বি,বি,এস ( এস) ডিগ্রী অর্জন করেছেন বলে দাবী করেন। কিন্তু বাংলাদেশে মেডিকেল প্রাকটিসের লাইসেন্স প্রদানের একমাত্র আইনগত সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)’র প্রদত্ত কোন রেজিষ্ট্রেশন বা সনদপত্র দেখাতে পারে নাই ।অন্যদিকে “পিচব্লেন্ড ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি” নামক প্রতিষ্টানটি বাংলাদেশে বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনেরও অনুমোদনকৃত নয় বলেও নিশ্চতি হওয়া গেছে ।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে সাতলা গ্রামের মোঃ বেনজির বালী অভিযোগ করে বলেন তার বাবা আঃ লতিফ বালীকে রেজাউল ডাক্তার নামের এক দানব অপচিকিৎসা দিয়ে প্রায় হত্যাই করে ফেলেছিলো,কিন্তু পরবর্তিতে ঢাকায় ল্যাব এইড হাসপাতালে নিয়ে তার বাবার জীবন ফিরে পেতে হয়েছে।তাছারা নয়াকান্দি গ্রামের মতলেব হাওলাদার, ফরাজী বাড়ির শাহজাহান সরদার,রাজাপুরের নুরু হাওলাদার সহ অনেক রোগীরাই মানুষ হত্যাকরী ভুয়া এম,বি,বিএস,ডাক্তার মোঃ রেজাউল করিমের অপচিকিৎসায় মৃত্যুবরন করেছেন।এসব মৃত্যুবরন কারী রোগীদের পরিবারের লোকজন অসচ্ছল ও কম বুঝদার হওয়ার কারনে রেজাউলের বিরুদ্ধে কোন আইনি পদক্ষেপে নিতে পারেন নি ।
মানুষের জীবন নিয়ে তামাসা করা ভুয়া ডাক্তার রেজাউল করিম ২০০৩ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা দাখিল মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৩ পয়েন্ট পেয়ে দাখিল পাশ (এস,এস,সি)করেছিলো। দাখিল পাশ পর্যন্তই তার শিক্ষা জীবন । এরপরে সে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ২০০৭ সালে একটি এইচ,এস,সি পাসের সনদপত্র বের করে বা তৈরী করে,যা সম্পুর্নই জাল বা ভুয়া । মোঃ রেজাউল করিম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ,এস,সি পাসের যে সনদপত্রটি বিভিন্ন দপ্তরে দাখিল করেছে তাতে দেখা যায় ষ্টুডেন্ট আইডি নম্বর 04-0-11-165-023 । অন্যদিকে বাংলাদেশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৭ সালে 04-0-11-165-023 এই একই ষ্টুডেন্ট আইডি নম্বরে মানিকগঞ্জের মতিলাল ডিগ্রী কলেজ থেকে জিপিএ 1.85 পেয়ে বৈধ ভাবে এইচ,এস,সি পাশ করেছেন জনৈক মোহাম্মদ মোশারেফ হোসাইন,তার পিতার নাম এমডি মনির উদ্দিন এবং মাতার নাম শাহেরা বেগম। মজার ব্যাপার হলো উল্লেখিত সনদপত্রে মোঃ রেজাউল করিমের মায়ের নাম কোথাও লেখা নেই । এতে পরিস্কার ভাবেই প্রমানিত হয় যে, রেজাউল করিম 04-0-11-165-023 এই ষ্টুডেন্টি আইডটি ব্যাবহার করে তার নামে একটি জাল এইচ,এস,সি পাসের সনদপত্র তৈরী করে নেয় ।
এছারা তার এম,বি,বিএস সনদপত্র সহ আরো কিছু সনদপত্র জাচাই করে দেখা যায় যে "চার্টার অফ অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অফ ইন্ডো এ্যালোপ্যাথি এন্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন"
৯৭/৬বি, হাজরা রোড কোলকাতা ২৬, ঠিকানা থেকে এসব সনদপত্র গুলো সে সংগ্রহ করেছে। কিন্তু ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উল্লেখিত ঠিকানায় একাধিকবার তল্লাসী করেও "চার্টার অফ অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অফ ইন্ডো এ্যালোপ্যাথি এন্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন"
নামক সনদপত্র প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সন্ধ্যান পাওয়া যায় নাই । এ থেকে পরিস্কার ভাবেই বোঝা জায় টাকার নেশায় উন্মাদ, ভুয়া জাল সনদপত্র দিয়ে নিজেকে এম,বি,বিএস ডাক্তার বানিয়ে কয়েক বছরে কোটিপতি হওয়া মোঃ রেজাউল করিম কতটাই জাল জালিয়াতি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে গোপালগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় সুপারের দায়িত্তে থাকা রেজাউলের বড় ভাই মাওলানা রুহুল আমিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে রেজাউলের এসব অপকর্মের সেল্টার দিয়ে যাচ্ছে ।যে কোন ধরনের সংস্থাই রেজাউল করিমের মায়ের দোয়া ক্লিনিকে গেলে সে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেই এমন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন বলে হুংকার ছারেন এবং ভয় দেখান।
এ ব্যাপারে বরিশালের সিভিল সার্জন মোঃ মনোয়ার হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান গত এক বছরে পশ্চিম সাতলা গ্রামের মায়ের দোয়া ক্লিনিকের মালিক মোঃ রেজাউল করিমের নামে একাধিক অভিযোগ পেয়ে দুইবার আমি নিজে সেখানে তদন্তে গিয়েছি,তার সকল সনদপত্র পরীক্ষা নিরিক্ষা করে তা ভুয়া বা জাল বলেই প্রাথমিক ভাবে প্রমানিত হয়েছে,কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলেই বিভিন্ন প্রতিকুলতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে,যে কারনে বার বার পিছিয়ে যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে, তবে সে কোনমতেই এম,বি,বিএস তো দুরের কথা,কোন হাতুরে ডাক্তার হবারও যোগ্য নয়।
এ বিষয় উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শওকত আলী বলেন রেজাউলের বিরুদ্ধে অসহায় সাধারন মানুষকে অপচিকিৎসা দেওয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে গেলেই তার বড় ভাই মাওলানা রুহুল আমিন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ভাবে বিব্রত করে।তবে দুর্নিতী দমন কমিশন(দুদুক), আয়কর বিভাগ,সহ অন্যান্য একাধিক সরকারী প্রতিষ্ঠান চাইলেই রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারে । এ বিষয় অভিযুক্ত রেজাউল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন দেশে এমন কোন সংস্থা নেই যে, রেজাউল ডাক্তারের কিছু করবে ।রেজাউল ডাক্তার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েই এখানে ক্লিনিক তৈরী করে ডাক্তারী করছে, ফলে তার বিরুদ্ধে এক মাষ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেও কোন লাভ হবে না ।
No comments:
Post a Comment