মাগো আমাকে আর জোর করে ঢাকায় পাঠিওনা। ওরা আমাকে লাশ বানিয়ে পাঠাবে।
আমার স্বামী প্রতিদিন আমাকে মারে। একা একা বাসায় কাঁদতে কাঁদতে চোঁখের জল ও
শুকিয়ে গেছে আমার। প্রতিদিন বলে তুুই মর। তোর বাবা-মা আমার বাবার সম্পদ
দেখে তোকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছে। আমি অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করলে তাতে
তোর কি ? এভাবেই শনিবার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে
সংবাদ কর্মীদের মেয়েকে প্রতিদিনের নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সম্প্রতি
পরপারে চলে যাওয়া নিহত বর্নালী মজুমদার বন্যার মা শিখা রানী সেন। ওই সময়
শিখা রানী তার মেয়েকে তার জামাই মিথুন গং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে দাবি
করে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। অন্যথায় ওদের টাকা আর প্রভাবের
কাছে সব চাপা পড়ে যাবে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনার তদন্ত
সাপেক্ষে বিচার চেয়ে অসংখ্য পোস্ট লক্ষ্য করা গেছে।
শিখা রানী জানান,
৫ বছর পূর্বে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের বাবুল মজুমদার
এর মেয়ে বর্ণালী মজুমদারের সাথে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ছয় নাম্বার ওয়ার্ডের
চুনি লাল দের ছেলে মিথুন দে(রাহুলের) সাথে পারিবারিক সম্মতিতেই বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকেই প্রতিনিয়ত মিথুন ও মিথুনের পরিবার বর্ণালীকে শারিরীক ও
মানসিক নির্যাতন করত। নির্যাতন করে তারা কয়েকবার বর্ণালীকে বাসা থেকেও বের
করে দেয়। এক পর্যায়ে বর্ণালী ঢাকায় স্বামীর বাসা থেকে বোরহানউদ্দিনে চলে
আসে। বর্ণালীর পরিবার আইনের আশ্রয় নিতে যাচ্ছে শুনে তার স্বামী, শ্বশুর,
শাশুড়ি বর্ণালীর মা-বাবাকে অনুরোধ করে বর্ণালীকে অনেকটা জোর করেই ঢাকায়
বনশ্রীতে স্বামীর বাসায় নিয়ে যায়। পাঠানোর সময় বর্ণালী তার মা-বাবা ও
আত্মীয় স্বজনের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি আর ঢাকা যাবো না। আমার স্বামী ও
শ্বশুর শ্বাশুরী আমাকে লাশ বানিয়ে তোমাদের কাছে পাঠাবে। শেষ পর্যন্ত
বর্ণালীর কথাই সত্য প্রমানিত হলো। লাশ হয়েই বাপের ভিটায় ফিরলেন বর্ণালী
বন্যা।
গত ২ জুলাই রাতে বনশ্রী এ ব্লকের ২ নম্বর রোড সংলগ্ন তাদের
বাসা থেকে রাত ১১ টার দিকে অচেতন অবস্থায় বর্ণালীর স্বামী মিথুন তাকে ঢাকা
মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা
করেন। এর আগে বর্ণালীর কোন অসুস্থতার কথা তার বাবা-মাকে জানানো হয়নি। এদিকে
বর্ণালীর মৃতর খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে বর্নালীর স্বামী মিথুন বর্ণালীর
লাশ হাসপাতালে ফেলে রেখে রহস্যময় কারণে আগেই রমপুরা থানায় গিয়ে আটকের নাটক
করে বলে অভিযোগ করেন বর্ণালীর পরিবার। অভিযোগ রয়েছে, স্বামী মিথুনের খালাতো
ভাই এস আই দিপক দে ঢাকা কমিশনার অফিসে কর্মরত থাকায় সে নিজেই মিথুনকে
রামপুরা থানায় নিয়ে যায়।
পরে মৃত বর্ণালীর পরিবার রামপুরা থানায়
গেলে দেখেন এস আই দিপক থানায় যাতে মামলা দিতে না পারে তার জন্য তদবির
চালাচ্ছেন। বর্তমানে মৃত বর্ণালীর দেড় বছরের কন্যা সন্তান রাশিকা ও কাজের
মেয়ে এস আই দিপকের বাসায় আছে বলে জানান এস আই দিপক। এ ব্যাপারে এস আই
দিপককে বর্ণালীর মেয়ে ও কাজের মেয়ে তার বাসায় কেন মঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে সে
বলেন, তারা কোথায় থাকবে? এ ব্যাপারে রামপুরা থানার ওসি আ. কুদ্দুস ফকিরের
কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কি কারণে বর্ণালীর মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্তের
প্রতিবেদনে পর প্রকৃত ঘটনা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেব।
No comments:
Post a Comment