সারা বিশ্বের কাছে মানবতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে। কিন্তু তাঁর সেই মানবতাবোধ এবং স্থানীয়দের সৌহার্দ্য সম্প্রীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনৈতিক, সন্ত্রাসীসুলভ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে সেই রোহিঙ্গারা। স্থানীয় বাঙালিদের ওপর আক্রমণ, নির্যাতন তো করছেই, এমনকি তাদের হাতে হত্যার শিকারও হয়েছে স্থানীয়রা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছে সহায়-সম্বল, ফসলি জমি। এমনকি ভিটে বাড়ির উঠানও।মিয়ানমার সেনাকর্তৃক সীমাহীন নির্যাতনে বিতাড়িত এসব রোহিঙ্গাদের জন্য এক সময় চোখের পানি ফেলা স্থানীয় বাসিন্দারা আজ মারকুটে, দাঙ্গাবাজ রোহিঙ্গাদের দাপটে অসহায়।
স্থানীয়দের দাবি, তাদের সন্তান স্কুলপড়ুয়া শিশুদের পর্যন্ত কারণে অকারণে রোহিঙ্গারা দলবেঁধে এসে মারধর করা এখন ক্যাম্পের নিত্যদিনের চিত্র। স্থানীয় শিশুরা ঠিকমত খেলাধুলা করতে পারে না। ক্যাম্পের আশপাশে তাদের খেলতে দেখলে তেড়ে এসে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়াটা যেন রোহিঙ্গা যুবকদের জন্য এক ধরনের গৌরব! তাদের মাঝে দখলদারিত্বের মনোভাব ফুটে উঠেছে স্পষ্টভাবে। যেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা নয়, কক্সবাজারের স্থানীয়রাই উল্টো এখানে তাদের দয়া দাক্ষিণ্যের ওপর বেঁচে আছে!
প্রতিবাদ করলে রোহিঙ্গারা দলবেঁধে স্থানীয়দের পিটিয়ে উল্লাস করে। তুচ্ছ কারণে হামলা করে স্থানীয়দের উপর। স্বদেশ তাড়িত এই জাতির কারণে বাড়ছে খুনোখুনি। সুখশান্তি বিনষ্ট হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।রোহিঙ্গা আশ্রিত এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, নিজেদের মধ্যে মারামারি খুনোখুনি করে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো অশান্ত করে তুলছে। দিন দিন বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। যতই সময় গড়াচ্ছে রোহিঙ্গা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গারা পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃতজ্ঞ জাতি। ১৯৯২ সালে একবার রোহিঙ্গারা এক সাথে দা-বটি লাঠি হাতে একযোগে স্থানীয়দের উপরে পাকহানাদার বাহিনীর মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে সময় রোহিঙ্গারা উখিয়া-টেকনাফকে তাদের রাজ্য দাবি করে স্থানীয়দের ৩ দিনের মধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে আল্টিমেটাম দিয়েছিল। রোহিঙ্গাদের অত্যাচারে স্থানীয়রা একদিন পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
আমেনা বেগম নামের এক বায়োবৃদ্ধা নারী বলেন, ‘জান্নাত পাবার আশায় সহায় সম্বল যা ছিলো তার সবই রোহিঙ্গাদের দান করে দিয়েছি। যাদেরকে দান করেছি, তারাই এখন আমাকে আমার ভিটেমাটি দখল করে নিয়ে তাদের আত্মীয়দের নিয়ে এসেছে। এখন মনে হচ্ছে চরম ভুল করেছি, তারা আসলে অমানুষ ও অকৃতজ্ঞ।’
স্থানীয় দোকানদার নোমান বলেন, এদেরকে দেখে বুঝলাম, মগদের আসলেই কোন দোষ নেই, রোহিঙ্গারা এমন এক জাতি, যে দেশে তাদের আশ্রয় দেয়া হবে, সে দেশটি তারা ধ্বংস করে দেবে। স্থানীয়দের কথা না হয় বাদ দিলাম। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে শতাধিক মারামারির ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, রোহিঙ্গারা সংখ্যায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় অপরাধ করেও চিহ্নিত করতে না পারলে পার পেয়ে যায়। তবে পুলিশ সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখছে বলেও জানান তিনি।
বিশৃঙ্খলা করলে সহ্য করা হবে না জানিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নিজেদের ভিতরে মারামারি-হানাহানি করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’তিনি স্থানীয়দের প্রশংসা করে বলেন, ‘আশা করি স্থানীয় জনগণ যেভাবে সবসময় রোহিঙ্গা বিষয়ে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন। তা অব্যাহত রাখবে দেশের স্বার্থে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। স্থানীয়দের সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে। তবে প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম ঠিক কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে জানাতে পারেননি।
No comments:
Post a Comment