হাতে পায়ে ধরেও মনে গলেনি, গুড়িয়ে দিল শিক্ষকের ‘রণজিৎ ফার্মেসী’ - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

হাতে পায়ে ধরেও মনে গলেনি, গুড়িয়ে দিল শিক্ষকের ‘রণজিৎ ফার্মেসী’



আমি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছি। এখন বয়স হয়েছে এখন আর আগের মতো পারি না। তাই ওষুধের দোকান দিয়ে এলাকায় সেবার পাশাপাশি জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছি। আমি এখানে ভাড়ায় দোকান নিয়েছি। বৈধ না অবৈধ সেটা জানা নেই। তারপরও যদি অবৈধ দখল হয়ে থাকতে তাহলে আমি সরিয়ে নিবো। আমাকে একটা ঘণ্টা সময় দিন।’

২৬ মে রোববার দুপুরে এভাবে আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি ও প্রবীণ সংবাদিক, কলামিস্ট ষাটোর্ধ্ব রণজিৎ মোদকের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ এলাকার ওষুদের দোকান ‘রণজিৎ ফার্মেসী’। ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে বুড়িগঙ্গা, মেঘনা ও শীতলক্ষা নদীর তৈরি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা। শুরুতে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর রোববার সকাল থেকে বুড়িগঙ্গা নদী ফতুল্লা লঞ্চ ঘাট এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় দুপুরে ফতুল্লার ডিআইটি মাঠ এলাকায় নদীর তীরের রণজিৎ মোদকের ওষুদের দোকান ‘রণজিৎ ফার্মেসী’ ভেঙে গুড়িয়ে দেয় বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, চৌচালা টিনের দোকানটি ভেঙে গুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। দোকানের ভেতরে থাকা আসবাবপত্রও ভেঙে ফেলা হয়েছে। ফলে আসবাবপত্রে থাকা ওষুধ সহ অন্যান গুরুত্বপূর্ণ সব কিছুই নষ্ট হয়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক পাখা, লাইট সহ মূল্যবান সম্পদগুলো। এমনকি দোকানের ভেতরে থাকা টাকা রাখার বাক্সও বের করতে পারেনি দোকানদাররা।

কান্না জড়িত কণ্ঠে রণজিৎ মোদক নিউজ নারায়ণগঞ্জকে বলেন, আমার জীবনের শেষ সম্বলই ছিল এ দোকান। শিক্ষকতা করেও টাকা জমিয়ে এ দোকান দিয়েছি। এটা দিয়ে সংসার চলে। এ বয়সে আমার দোকান ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমি কি করে বাঁচবো। আমার সংসার কি করে চলবে। এতো করে বলেছি মাত্র ১টা ঘণ্টা সময় দেন আমি সব সরিয়ে নিচ্ছি। তাও শুনলো না। সময় তো দেয়নি বরং দোকানের ভেতরে থাকা শিশুদের কোলে নিয়ে মায়েরা, আমার ছেলে, দোকানের কর্মচারী ও ডাক্তার কেউ বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। হঠাৎ করেই ভাঙতে শুরু করেছে। কোন রকম দৌড়ে বের হয়েছে সবাই। এতে শিশুরা সহ রোগীর স্বজনরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অল্পের জন্য আমার ছেলেও দোকান কর্মচারীরা রক্ষা পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন সাংবাদিক। আমিও জানি নদী দখল করা অন্যায়। কিন্তু আমি এখানে ভাড়ায় দোকান করছি দীর্ঘদিন ধরে। এর আগেও অনেক বার উচ্ছেদে এসেছে। কিন্তু তখন তারাই এটা উচ্ছেদ করেনি যে তাদের নদীর সীমানায় পড়েনি। এবারই তারা এসে হঠাৎ করে ভাঙতে শুরু করেছে। এর আগে কোন নোটিশ দেয়নি। মাত্র ১ ঘণ্টা সময়ে চেয়েছি মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য সেটুকুও দেয়নি। দোকানে কয়েক লাখ টাকার ওষুধ সহ আসবাবপত্র ছিল। সব নষ্ট করে ফেলেছে। আমি পথে বসা ছাড়া আর কোন কিছু নেই।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি কার কাছে যাবো। কে আমার পাশে দাঁড়াবে। আমার সব শেষ। এ বয়সে আমি কিভাবে সংসার চলাবো। নতুন করে একটা দোকান সাজানোর জন্য এতো টাকা কোথায় পাবো। আর যে মালমাল নষ্ট করেছে সেগুলোও কোম্পানির বাকি ছিল। তাদের টাকাই বা কিভাবে পরিশোধ করবো। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই এর ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক। না হলে আমি বাঁচতে পারবো না।

স্থানীয় দোকানদার রহমত উল্লাহ বলেন, আমরাও রণজিৎদার দোকানটার জন্য সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু কোন সময় দেয়নি। সব দোকান ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। রণজিৎ দা সকলের খুব উপকার করেন। যেকোন বিপদ হলেই সকলের পাশে দাঁড়ান। কোন রোগ হলে ওনার দোকানে গেলে টাকা ছাড়াও ওষুধ দিয়ে দেন। এরকম একটা ভালো মানুষকে পথে বসিয়ে দিল বিআইডব্লিউটিএ। আমার এ বিচার চাই। অবিলম্বে এর জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।