কুরুক্ষেত্রে, শ্রীকৃষ্ণের বলা গীতার বাণী শুনলো কে আর লিখলো ই বা কে, কিভাবে ? - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

কুরুক্ষেত্রে, শ্রীকৃষ্ণের বলা গীতার বাণী শুনলো কে আর লিখলো ই বা কে, কিভাবে ?



(Requested post : request র এক ব্যক্তি আমাকে করেছে, আগে দেখে নিন তার সেই প্রশ্নগুলো, তারপর দেখবেন আমার
 উত্তর :“আমি যদি আপনার দেখানো পথে আপনাকেই প্রশ্ন করি যে প্রমাণ করুন কিসনো বলে একজন কেউ ছিলেন যে গীতার বাণী বলেছিল! এবং সে যদি বলে থাকে তাহলে লিখলোই বা কে? আর যদি বলেই থাকে বা কেউ লিখেই থাকে, তাহলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কতক্ষণ থামিয়ে কতক্ষণ বা কতদিন ধরে তার বাণী বলেছিল ও লেখা হয়েছিল? কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে বলা বাণী পরে কে কিভাবে লিখলো, সে কি তখন সেই যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত ছিল ও পরে লিখেছিল নাকি যুদ্ধ থামিয়ে দুপক্ষের সেনাদের দিবানিদ্রায় পাঠিয়ে তবে লিখতে বসেছিল সেই মাঠেই? @ Uttam Kumar Das Das”ভগবান মানে কী ?আপনার পদবি দাস দাস, দুবার কেন দাস বুঝলাম না? আপনি কেন গীতার গুনগান করছেন যে গীতা আপনার দাস পদবী চাপিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী এই পৃথীবির ঘৃণ্যতম বর্ণব্যবস্থাকে স্থায়ী করার কথা বলে? আপনি নিজে যে চরম ঘৃণার শিকার তাকেই আবার মাথায় তুলে নাচছেন?Like • Reply • 1 hr • Edited(যে আই.ডিতে উনার সাথে আমার এই বাকযুদ্ধ আমার সেই আই.ডির নাম ছিলো Uttamহিন্দু সংবাদ Kumar Das Das)আমার জবাব:অনেক হিন্দুর মাথাতেই এই প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে যে, আরে তাই তো, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ তো গীতার এসব কথা শুনিয়েছিলো শুধু অর্জুনকে, কিন্তু অর্জুন তো আর মহাভারত এবং তার মধ্যে গীতা লিখে নি, তাহলে গীতার বাণীগুলো লিপিবদ্ধ করলো কে এবং কিভাবে ? এর সাথে এই প্রশ্নও আসতে পারে যে, যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে কিভাবে কৃষ্ণ ১৮ অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক সম্বলিত গীতার এত কথা বললেন, তা শুধু অর্জুনই শুনলো, আর অন্য কেউ শুনলো না ? এই সময়টি তিনি পেলেন কোথায় ? যে প্রসঙ্গটি Prithwiraj Modak তার কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে। এটা সহ তার সকল প্রশ্নেরই জবাব দিচ্ছি নিচে-আমরা সাধারণভাবে মনে করি, শ্রীকৃ্ষ্ণের মুখে গীতার বানী শুধু অর্জুন একাই শুনেছিলো, কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়, গীতার বাণী শুনেছিলো আরো কয়েকজন, এর মধ্যে একজন বর্বরিক।বর্বরিক, ভীম ও হিডিম্বার পুত্র ঘটোৎকচের ছেলে। এককথায় পাণ্ডুপুত্র ভীমের নাতী । বর্বরিক ছিলো খুবই কৃ্ষ্ণ ভক্ত। একদিন সে তার মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে কৃষ্ণের হাতে মরলেই সে কেবল মোক্ষলাভ করতে পারবে। তাই সে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে কৌরবদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করার জন্য আসছিলো, কারণ কৃষ্ণ পাণ্ডবদের পক্ষে যুদ্ধ করবে। বিষয় টি জানতে পেরে কৃষ্ণ এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে বর্বরিকের সাথে রাস্তায় দেখা করে এবং নানা কথাবার্তার পর সুদর্শন চক্র দিয়ে বর্বরিকের মাথা কেটে তার কৃষ্ণের হাতে মরার শখ পূরণ করে দেয়। শেষে বর্বরিকের অনুরোধে কৃষ্ণ তার মাথাটাকে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত জীবিত রাখে, যাতে সে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ দেখতে পায়। এই বর্বরিকের কাটা মাথা একটা গাছের উপর থেকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সব দৃশ্য দেখে, এ্ইভাবে সে গীতার বাণীও শুনে। কিন্তু বর্বরিক তো গীতা লিখে নি। তাহলে ?বর্বরিক ছাড়াও গীতার বাণী শুনেছিলো আরেকজন, পবন পুত্র হনুমান; কিন্ত কিভাবে ?অর্জুন পাশুপত অস্ত্র সংগ্রহ করতে যাওয়ার সময় দেখে এক বৃদ্ধ বানর তার পথরোধ করে শুয়ে আছে। পথ ছাড়তে বললে বানরটি অর্জুনকে বলে তার লেজ সরিয়ে পথ করে নিতে, কিন্তু অর্জুন তার লেজ সরাতে না পেরে বুঝতে পারে যে এটা সাধারণ কোনো বানর নয়। এর পর অর্জুনের অনুরোধে বানর তার আসল রূপ দেখায় এবং আশীর্বাদ স্বরূপ যুদ্ধের সময় অর্জুনের রথের উপর অবস্থান করে তাকে সাহায্য করবেন বলে কথা দেন। এজন্য অর্জুন তার রথের উপর হনুমানের আশীর্বাদের চিহ্ন হিসেবে কপিধ্বজ (পতাকা) স্থাপন করে, যেখানে হনুমান অশরীরীভাবে অবস্থান করে অর্জুনকে সাহায্য করে। এভাবে বর্বরিকের সাথে সাথে হনুমানও গীতার বাণী শুনে। কিন্তু হুনমানও তো গীতা লিখে নি। তাহলে ?গীতার বাণী সরাসরি শুনেছিলো আর একজন। তিনি সঞ্জয়, ধৃতরা্ষ্ট্রের অনুচর, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে হস্তিনাপুরের প্রাসাদে থেকে। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব হয়েছিলো ?যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগ মূহুর্তে কোনো একটা কারণে মহর্ষি বেদব্যাস হস্তিনাপুরে ধৃতরাষ্ট্রের প্রাসাদে যান। সেখানে তিনি বলেন, ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ হলেও তিনি তার দিব্যশক্তি দ্বারা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সমস্ত ঘটনা তাকে দেখাতে সক্ষম, তিনি তা দেখতে চান কি না ?ধৃতরাষ্ট্র যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতাকে দেখতে চান না বলে সেই ক্ষমতা তার সহচর সঞ্জয়কে দিতে বলেন, যাতে সঞ্জয়ের কাছ থেকে তিনি তা শুনে নিতে পারেন। একজন্য বেদব্যাস, সঞ্জয়কে সেই দিব্যদৃষ্টি দান করেন, যাতে সঞ্জয় হস্তিনাপুরের প্রাসাদে থেকেও যুদ্ধের সব ঘটনা দেখে তা ধৃতরাষ্ট্রকে বর্ণনা করতে পারে এবং বর্ণনা করে। গীতার প্রথম অধ্যায়ে এই সঞ্জয়ের ই কথা বলা্ আছে। কিন্তু এই সঞ্জয়ও তো গীতা লিখে নি। তাহলে গীতা লিখলোটা কে ?কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হলে মহর্ষি বেদব্যাস ধ্যানযোগে মহাভারতের সমস্ত ঘটনা স্মরণ করেন এবং পৃথিবীর লোকজনের জন্য তা লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই কাজে তিনি নাকি গণেশ এর সাহায্য নেন। যা হোক, সেটা অন্য প্রসঙ্গ। মহর্ষি বেদব্যাস যে মহাভারত রচনা করেছেন, সেটাই আমরা জানি এবং সেই সূত্রেই আমরা দেখার চেষ্টা করবো আসলে গীতা কিভাবে লিখিত হলো ?আমরা এও জানি যে, গীতা মহাভারতেরই একটি অংশ, যা “আদি শংকরাচার্য” কর্তৃক মহাভারত থেকে সংকলিত হয়ে আলাদ পুস্তক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এই শংকরাচার্য সেই শংকরাচার্য, যিনি মাত্র ৮ বছর বয়সের মধ্যে চারটি বেদ আয়ত্ব করেছিলেন এবং সম্রাট অশোকের সময়ে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হয়ে যাওয়া ভারতের বেশির ভাগ লোককে- বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরকে তর্কে পরাজিত করে- হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে এনেছিলেন। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে ম্লান হয়ে যাওয়া হিন্দুধর্মকে এই শংকরাচার্য ই পুনর্জীবন দান করেন ৭০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে।যা হোক, ব্যাসদেব, কিভাবে মহাভারত স্মরণ করলো এবং তার মধ্যে কিভাবে গীতা লিখলো সেটা বোঝার জন্য এবার কমনসেন্সটাকে একটু খাটান। যে ব্যক্তি জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধ দেখানোর ক্ষমতা রাখে, যে ব্যক্তি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ২৩০ কি.মি. দূরের হস্তিনাপুরের প্রাসাদে অবস্থিত সঞ্জয়কে যুদ্ধ দেখাতে পারে, একটু ভাবুন সেই ব্যক্তি কোন ক্ষমতা বলে এই কাজটি করলো ? যে ব্যক্তি নিজে দেখে নি, সেই ব্যক্তি কি অন্যকে কিছু দেখাতে পারে? মূলত ব্যাসদেব, সঞ্জয়কে যুদ্ধ দেখানোর সময় আধুনিক যুগের রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করেছিলো, প্রথমে সে দেখেছিলো, তারপর সঞ্জয়কে দেখিয়েছিলো; যেমন আধুনিক যুগের বেতার এবং টিভির রিলে স্টেশনগুলো মূল কেন্দ্র থেকে পাঠানো অনুষ্ঠানগুলো প্রথমে ধরে তারপর তা নিজের এলাকায় সম্প্রচার করে; ব্যাসদেব ঠিক এই কাজটিই করেছিলেন।আশা করছি- গীতা, কে এবং কিভাবে লিখলো সে বিষয়টি পাঠকদের কাছে পরিষ্কার হয়েছে।গীতার বাণী কে এং কিভাবে লিখলো, এটা Modak সাহেব এর প্রধান প্রশ্ন হলেও তার প্রথম প্রশ্ন ছিলো, আপনি প্রমান করুন যে কৃষ্ণ নামে কেউ ছিলো।এর উত্তরে বলছি,আপনার দাদু ছিলো বলেই তার নাম আপনি জানেন এবং আপনার আশে পাশের বা আপনার গ্রামের কিছুলোক তার সম্বন্ধে জানে, না থাকলে কিন্তু জানতো না। সেই রকম কৃষ্ণ নামে কেউ ছিলো বলেই তাকে নিয়ে এত কথা, এত কাহিনী, চারেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; কৃষ্ণ না থাকলে এসবের কিছুই থাকতো না।তার অন্য প্রশ্ন হচ্ছে, “তাহলে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ কতক্ষণ থামিয়ে কতক্ষণ বা কতদিন ধরে তার বাণী বলেছিল ও লেখা হয়েছিল?”কিভাবে গীতার বাণী লিখা হয়েছে তার বিস্তারিত বর্ণনা তো একটু আগেই দিয়েছি। এখন বলছি, যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে ১৮ অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক সম্বলিত গীতার এত কথা বললেন, যা শুধু অর্জুনই শুনলো, আর অন্য কেউ শুনলো না ? এই কথা বলাবলির সময় কৃষ্ণ এবং অর্জুন পেলেন কোথায় ?ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান হয় তাহলে তার পক্ষে সব কিছুই করা সম্ভব। যুদ্ধক্ষেত্রে যখন দুই বাহিনী দুই প্রান্তে প্রস্তুত, নিজের স্বজন ও গুরুর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলতে হচ্ছে দেখে যখন অর্জুন বিমর্ষ, অর্জুন যখন শক্তিহীন, যখন যুধিষ্ঠির এবং ভীষ্ম শংখ বাজিয়ে যুদ্ধের ঘোষণা্ দিতে যাচ্ছে, ঠিক তখন অর্জুনের এই অবস্থা দেখে কৃষ্ণ দুই পক্ষের সমস্ত যোদ্ধাকে ফ্রিজ করে দেন, যে যেখানে যে অবস্থায় বা যে ভঙ্গিতে ছিলো, সে সেই অবস্থাতেই থেকে যায়, ২০১৪ সালে স্টারপ্লাস বা স্টার জলসা যে মহাভারত দেখালো সেটা যদি কেউ দেখে থাকেন তাহলে আমি যে সিচুয়েশনের কথা ব্যাখ্যা করছি তা ভালোভাবে বুঝতে পারবেন; অথবা আগে দেখে না থাকলে ইউটিউবে ভিডিও আছে সার্চ করে শুধু কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শুরুটা দেখে নিয়েন, তাহলেও বুঝতে পারবেন আমি কী বলতে চাইছি। এভাবে সবাইকে কৃষ্ণ স্থির করে রাখেন ততক্ষণ, যতক্ষণ গীতার বাণী বলা্ শেষ না হয় এবং অর্জুনের দ্বিধা কেটে না যায়। এরপর অর্জুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে, শ্রীকৃষ্ণ সবাইকে স্থির অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেয় এবং তারপর যুদ্ধ শুরু হয়। সুতরাং যুদ্ধক্ষেত্রে গীতা বলা্র সময় কৃষ্ণ কেথায় পেলো আশা করি তা পরিষ্কার হয়ে গেছে।তার পরের প্রশ্ন হচ্ছে, ভগবান মানে কী ?বিষ্ণুপুরাণ (৬.৫.৭৯) এ বলা আছে,যার- ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ৬ টি গুণ আছে তিনিই ভগবান। যে কেউ এই ৬ টি গুন অর্জন করে ভগবান হতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে এইসব গুণ অর্জন করে ভগবান হওয়া অসম্ভব, একমাত্র অবতারদের মধ্যেই এই সব গুণের সমম্বয় হতে পারে। কৃষ্ণের মধ্যে এই সব গুণ ছিলো বলেই তাকে বলা হয় ভগবান, যদিও তিনি সকল গুণের আধার হিসেবে পরমেশ্বরও। তবে এখানে একটা সূত্র মনে রাখতে হবে যে, কেবলমাত্র ঈশ্বরকেই ভগবান বলে ডাকা যেতে পারে; সকল ভগবানকে ঈশ্বর নয়। কারণ, ঈশ্বর এক এবং তিনি সকল গুণের আধার কিন্তু ভগবান বহু এবং তারা মাত্র উপর্যুক্ত ৬ টি গুণের অধিকারী। একারণে বুদ্ধ ভগবান, পরশুরাম ভগবান, কিন্তু তারা ঈশ্বর নন। সূত্রটিকে এমনভাবে বলা যেতে পারে- ঈশ্বরই ভগবান, কিন্তু সকল ভগবান ই ঈশ্বর নয়। যেমন- প্রধানমন্ত্রী ই মন্ত্রী, কিন্তু সকল মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী নয়।তার শেষ বাক্যবাণ,“আপনার পদবি দাস দাস, দুবার কেন দাস বুঝলাম না? আপনি কেন গীতার গুনগান করছেন যে গীতা আপনার দাস পদবী চাপিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী এই পৃথীবির ঘৃণ্যতম বর্ণব্যবস্থাকে স্থায়ী করার কথা বলে? আপনি নিজে যে চরম ঘৃণার শিকার তাকেই আবার মাথায় তুলে নাচছেন? “আমি চেয়েছি এই আইডিতে এভাবেই নিজেকে পরিচিত করাতে, তাই দুই বার দাস লিখেছি। আপনি যদি আপনার নাম Prithwiraj Modak না লিখে Prithwiraj Modon লিখতেন, তাহলে আপনাকে সবাই মদন নামেই চিনতো এবং আপনি হতেন মদন, তাই এটা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কী আছে ?এবার আসি পদবী চাপিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে-শুধু আমার ‘দাস’ পদবী ই নয়, গীতা পৃথিবীর কারো উপর কোনো পদবীই চাপিয়ে দেয় নি, প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থাটাকে জাস্ট প্রকাশ করেছে বা তুলে ধরেছে মাত্র। আমি বৈষ্ণব ঘরের সন্তান, আমার পরিবারের সবাই ‘মহন্ত’ পদবী লিখলেও আমি লিখি দাস, যে দাস পদবী মুচি এবং জেলেরাও লিখে; কারণ, আমি সমাজের দৃষ্টিতে নীচু স্তরকে নিজে ধারণ করে উপরে উঠাতে চাই, তাই আমি মনে করি সকল মানুষ সমান- অবশ্য যদি তারা মানুষ হয় এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতোই আমিও মনে করি- জন্মসূত্রে কেউ আমার কাছে প্রিয় বা অপ্রিয় নয়, কেউ যদি আমার কাছে প্রিয় বা অপ্রিয় হয় সেটা হয় বা হবে তার কর্মগুণে। এই পদবীর ব্যাপারটা আমি আমার নিজের ইচ্ছায় করেছি, গীতা বা আমার পরিবার আমাকে করতে বাধ্য করে নি ।আপনার সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ হলো, “গীতা পৃথিবীর ঘৃণ্যতম বর্ণ ব্যবস্থাকে স্থায়ী করার কথা বলে।” আমি আপনাকে এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছি, বর্ণ ব্যবস্থা পৃথিবীর কোন সমাজে, কখন ছিলো না ? বর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র, এমন কি রয়েছে আপনার পরিবারের মধ্যেও । বর্ণ মানে হচ্ছে শ্রেণী বিভাজন। এই শ্রেণী বিভাজন ছাড়া কোনো সমাজ কখনো চলতে পেরেছে বা চলতে পারবে ?আপনি এবং আপনার স্ত্রী দুইজন দুই বর্ণের মানুষ। এখানে আমি গোত্র বা কাস্ট এর কথা বলছি না। এসব সাধারণ কথা আরো পরে বলবো, তার আগে কিছু উচ্চস্তরের কথা বলে নিই। আগেই উল্লেখ করেছি, বর্ণ মানে হচ্ছে শ্রেণী বিভাজন। এই বিভাজনে আপনার স্ত্রী নারী এবং আপনি পুরুষ। আপনি যখন একজন নারীকে বিয়ে করেছেন তখনই কিন্তু আপনি শ্রেনী বিভাজনকে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, গীতা কি আপনাকে এটা করতে বাধ্য করেছে ? শ্রেনী বিভাজনকে না মানলে সমকামিদের মতো আপনাকে অন্য একজন পুরুষকে বিয়ে করতে হতো, তাহলে আপনার বাবা হওয়ার বা আপনার বংশ রক্ষার কী হতো ?যখন বিয়ে করেছেন, তখন নিশ্চয় খুঁজেছেন একটি ফর্সা, সুন্দরী মেয়ে; এটা কি বর্ণ প্রথাকে স্বীকার করা নয় ? আপনি তো সুস্থ, সবল, পঙ্গু নয় এবং সন্তান জন্মদানে সক্ষম যেকোনো মেয়ে, সে দেখতে যেমনই হোক, তার গায়ের রং যেমনই হোক, তাকে বিয়ে করতে পারতেন, কিন্তু করেন নি কেনো ? গীতা কি আপনাকে এটা করতে বাধ্য করেছিলো, না আপনার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি আপনাকে এটা করতে বাধ্য করেছে ? নিজের ছেলের বিয়ে দেওয়ার সময়ও আপনি আবার সেই একই ঘটনা ঘটিয়ে ফর্সা, সুন্দরী মেয়ে খুঁজবেন। এই যে স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, এটা আপনার মধ্যে কে সৃষ্টি করেছে, আপনি নিজে, না প্রকৃতি নামের ঈশ্বর ? খেয়াল রাখবেন, আমি কিন্তু আগেই বলেছি, গীতা কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয় নি, সমাজের স্বাভাবিক বাস্তব অবস্থাকে প্রকাশ করেছে বা তুলে ধরেছে মাত্র।আপনার যদি একাধিক ভাই থাকে, তাহলে কোনো অবস্থাতেই আপনারা সব ভাই সব দিক থেকে সমান নন। কেউ হয়তো জ্ঞানে বেশি, কেউ অর্থ বিত্তে, কেউ সামাজিক প্রভাবে মানে মাস্তানিতে বা কেউ মান সম্মানে। একই পিতা-মাতার সন্তান হয়ে, একই বাড়িতে বড় হয়ে আপনাদের মাঝে এই শ্রেণী বৈষম্য কেনো ? গীতা কি আপনাদেরকে এটা করতে বাধ্য করেছে ?আপনি যদি কোনো অফিসে চাকরি করেন, তাহলে নিশ্চয় আপনার অফিসে আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অধঃস্তন কর্মচারী আছে, কারণ আপনি তো আর দেশের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী নন যে আপনার উপরে কথা বলার কোনো লোক থাকবে না। এটাও এক ধরণের বর্ণ বিভাজন বা শ্রেণী বৈষম্য, এই শ্রেনী বিভাজন মানতে কে আপনাকে বাধ্য করেছে ? গীতা ?বর্ণপ্রথা নিয়ে এতক্ষণ যা বললাম সেগুলো খুবই উচ্চস্তরের কথা বার্তা, এগুলো যদি আপনার মাথায় না ঢোকে, তাহলে আপনি আমাকে যে বিষয় ইঙ্গিত করে খুঁচিয়েছেন, এখন আপনাকে সেই লেভেলে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।ইসলামে নাকি কোনো জাত-পাত নেই, বর্ণ প্রথা নেই, সেখানে মানুষ মাত্র সবাই সমান। এটাকে বেজ করেই তো আপনি গীতাকে কটাক্ষ করেছেন ? এখন তাহলে এই ইসলামের বর্ণ প্রথা নিয়েই কথা বলি-আগে না থাকলেও, বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে হিন্দু সমাজের বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে- ঘোষ, নাপিত, সুইপার বা মেথরের মতো শ্রেণী সৃষ্টি হয়েছে; এদের কথা না হয় বাদ ই দিলাম; কোনো কসাই, মাছ ব্যবাসায়ী বা সবজিওয়ালাদের ছেলে মেয়েদের সাথে, কোনো সম্ভ্রান্ত ঘরের মুসলমান, যাদের বড় ব্যবসা বা চাকরি আছে, তারা কি তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি করবে ?আপনার কমনসেন্স কী বলে ?করবে না।কিন্তু কেনো ? সবাই তো মুসলমান ? সবাই একই আল্লা এবং তার রাসূল মুহম্মদকে মানে, একই মসজিদে একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে, একই কোরান-হাদিস পড়ে, তাহলে তারা এই ধরণের সম্পর্ক তৈরি করবে না কেনো ?বলবেন, তাদের সামাজিক স্ট্যাটাস এক নয়।-সামাজিক স্ট্যাটাস এক নয় কেনো ? সবাই তো মুসলমান ? আর মুসলমানদের মধ্যে তো কোনো জাত-পাত, বর্ণ প্রথা নেই, তাহলে তাদের মধ্যে এই শ্রেণী বৈষম্য কেনো ? গীতা কি মুসলমানদেরকে বাধ্য করেছে এই বর্ণ বৈষম্য মানতে ?একই ধর্মের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার পরেও যেহেতু তাদের সামাজিক স্ট্যাটাস এক হয় নি, এর মানে হচ্ছে তাদের কর্ম বা পেশা বা তাদের গুণ বৈশষ্ট্যি তাদেরকে আলাদা করেছে। মুসলমানরা তো গীতা মানে না, তাহলে তাদেরকে তাদের গুণ ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে আলাদা করেছে কে ? নিশ্চয় সামাজিক বাস্তবতা ? সমাজের এই বাস্তবতাকেই গীতায় তুলে ধরে বলা হয়েছে,“চাতুর্বণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ" ( ৪/১৩)সুতরাং গীতা যে কারো উপর কিছু চাপিয়ে দেয় নি, সেটা চোখ-কান খোলা রেখে চারদিকে একটু তাকালেই উপলব্ধি করা যায়। অবশ্য নির্বোধদের কথা আলাদা, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের এত সন্ত্রাস দেখেও যে নির্বোধরা, মুসলমান হয়ে বা না হয়েও মনে করে ইসলাম শান্তির ধর্ম, সেই নির্বোধদের কথা বলছি; কারণ, এই নির্বোধরা হয় জেগে ঘুমিয়ে আছে অথবা এদের ঘুমই ভাঙে নি। কোনো হিন্দুর যদি ঘুম না ভাঙে তাহলে সেটা অবশ্য হিন্দু সমাজেরই দোষ, এই দোষ আমাদের পিতু বা পূর্ব পুরুষের, যারা ঘুম ভাঙানোর মন্ত্র আমাদের কানে দেয় নি।এই প্রসঙ্গে জাত-পাত বা বর্ণ প্রথা নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের আচরণের কিছু বিষয় তুলনা না করে পারছি না।হিন্দু ধর্মে জাতিভেদ আছে সত্য, কিন্তু তার জন্য এক হিন্দু কখনো অন্য হিন্দুর গলা কাটে না, এ নিয়ে কোনো মন্দিরে গন্ডগোলও হয় না; জাতিভেদ নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে খুনাখুনির কথাও কখনো শোনা যায় নি। কিন্তু তথাকথিত সাম্যের ধর্ম ইসলাম, যাতে নাকি কোনো জাতিভেদ নাই, যাতে সব মানুষই নাকি সমান- সেই মহান ধর্ম ইসলাম, ভিন্নমতের কারণে শুধু- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদিদেরকেই হত্যা করে না, হত্যা করে সামান্য মতভেদের কারণে নিজের জাতি ভাই মুসলমানদেরকেই এবং এইসব হত্যাকাণ্ড মসজিদের মধ্যে ঢুকে করতেও তারা দ্বিধাবোধ করে না, প্রত্যেকটা মুসলিম দেশে রয়েছে যার অসংখ্য উদাহরণ। এ প্রসঙ্গে আরও বলে রাখি, ইসলামে সব মুসলমান যেটুকু সমান, তা শুধু আপন মতবাদে বিশ্বাসীদের মধ্যে মসজিদে নামাজ পড়ার সময়। শিয়া, সুন্নী, আহমেদিয়া, কাদিয়ানীসহ আরও যেসব জাতিভেদ ইসলামে আছে তাদের কিন্তু আবার মসজিদ আলাদা আলাদা। এক বিশ্বাসীদের মসজিদে অন্যরা নামাজ পড়তে যায় না বা পড়তে পারে না।যখন কোনো মুসলমান বা যে কেউ হিন্দুধর্মের জাতিভেদ বা বর্ণ প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, তখন তাকে শুধু এই কথাটা বলবেন যে, হিন্দু ধর্মে জাতিভেদ আছে, এটা সত্য, কারণ জাতিভেদ সমাজের বাস্তবতা, অন্য পেশার লোকজেনের কথা না হয় বাদ ই দিলাম, সব মানুষ সমান হলে পায়খানা পরিষ্কার করতো কে ? কিন্তু তাই বলে আপনাদের শিয়া-সুন্নীর মতো এক হিন্দু অন্য হিন্দুকে খুন করে না। দেখবেন, ধর্ম নিয়ে চুলকানি বন্ধ হয়ে গেছে, কানের কাছে ঘেউ ঘেউ আর নেই।সুতরাং গীতা নিয়ে কেনো আমার এত গর্ব এবং এত নাচানাচি তা নিশ্চয় মোদক সাহেব বুঝতে পেরেছেন এবং সেই সাথে আমি এটাও আশা করছি যে, মোদক সাহেবের সকল প্রশ্নের এবং হিন্দুধর্ম নিয়ে তার নাক সিটকানির জবাব আমি দিতে পেরেছি।জয় হিন্দ।জয় শ্রীরাম। জয় শ্রী কৃষ্ণ

2 comments:

  1. আপনার বক্তব্যের একজায়গায় খটকা লাগলো। কুরুক্ষেত্রে দুপক্ষই যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, তখন কৃষ্ণ সবাইকে ফ্রিজ করে দিয়ে গীতার বাণী শোনানোর সময় বের করলেন যা টিভি সিরিয়ালে দেখানো হয়েছে। কিন্তু কোন প্রাচীন গ্রন্থে এই "সবাইকে ফ্রিজ " করার তথ্যটি আছে জানালে বাধিত থাকিব।

    ReplyDelete
  2. মনের কথা। ঈশ্বর নিয়ে যারা প্রশ্ন করে তারা অন্ধ

    ReplyDelete

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।