ভূমিখেকোর দখলে যাচ্ছে বড়লেখার জমিদার বাড়ি - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

ভূমিখেকোর দখলে যাচ্ছে বড়লেখার জমিদার বাড়ি

ভূমিখেকোর দখলে যাচ্ছে বড়লেখার জমিদার বাড়ি

মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখার পানিধার গ্রামের জমিদার বাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। একটি ভূমিখেকো চক্র কৌশলে এরই মধ্যে কিছু দেবোত্তর সম্পত্তিতে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। ফলে দেড়শ' বছরের পুরনো প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যগাঁথা বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ নিয়ে স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অভিযোগ করার পরও দখলদাররা বহালতবিয়তে আছে। ভূমিখেকোদের প্রাণনাশের হুমকিতে আতঙ্কিত জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকাররা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিয়ানীবাজার-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে বড়লেখা উপজেলার পানিধার গ্রামে প্রায় ১০ বিঘা জমি নিয়ে রামকুমার পুরকায়স্থের জমিদার বাড়ির অবস্থান। উপজেলার কাঁঠালতলী মৌজার ১০৩নং খতিয়ানের ৮৮২ ও ৮৮৩নং দাগে জমিদার বাড়ির ৫৪ শতক ভূমি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে উইল করে যান রামকুমার পুরকায়স্থ। এই ভূমির একাংশে দখলদার টিনের ঘর নির্মাণ করেছে। এদিকে ২০১৭ সালের জুনে রাধাকান্ত পুরকায়স্থ এ জমির মধ্যে ১৮ শতক পানিধার গ্রামের আছার উদ্দিনকে আমমোক্তার নিযুক্ত করেন বলে দাবি করছেন। এই আমমোক্তারনামার ক্ষমতাবলে তিনি ৯ দশমিক ৪৬ শতক ভূমি যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামীম আহমদ, জালাল আহমদ, জসীম উদ্দিনের কাছে বিক্রি করেন ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। এরপর প্রবাসীর ভগ্নিপতি লাল মিয়া টিনের ঘর নির্মাণ করে ওই ভূমিতে দখলদারিত্ব কায়েম করেছেন। এ নিয়ে জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মৃত রমাকান্ত রায়ের ছেলে রণজিৎ কুমার রায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, বড়লেখা থানাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি।

জানতে চাইলে রণজিৎ কুমার রায় সমকালকে বলেন, লাল মিয়া জালিয়াতি করে তাদের জমি জবর-দখলের চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুমকির বিষয়ে গত ২ এপ্রিল মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করে চিঠি দেন তিনি। একই দিন বড়লেখা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করলে থানা কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। আনুষ্ঠানিকভাবে তার অভিযোগটি গ্রহণও করা হয়নি। যদিও পরে তিনি জানতে পারেন থানা কর্তৃপক্ষ লাল মিয়ার নামে ১০৭ ধারায় একটি মামলা করেছে। এর পরও লাল মিয়া অনবরত তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছেন। বিষয়টি ওসি ও মামলা তদন্ত কর্মকর্তাকে টেলিফোনে ও এসএমএসের মাধ্যমে তিনি অবহিত করেছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী গ্রামের মৃত মখলিছ আলীর ছেলে লাল মিয়া ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের যোগসাজশে এলাকায় দখল-বাণিজ্য করছেন। এর আগে বিভিন্ন কৌশলে লাল মিয়া আরও সম্পত্তি দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

জানতে চাইলে বড়লেখা থানার ওসি মো. শহীদুর রহমান উল্লিখিত দাগের ভূমি দেবোত্তর সম্পত্তি- তার সত্যতা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, এই ভূমিতে যে কোনো প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখা হয়েছে। ওসি জানান, জমিদার রামকুমার পুরকায়স্থের উত্তরাধিকারদের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে লাল মিয়ার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

দেড়শ' বছরের পুরনো বাড়িটি নির্মাণ করেন তৎকালীন স্থানীয় জমিদার রামকুমার রায় পুরকায়স্থ। উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়িটির মালিক তার পরবর্তী প্রজন্ম। তবে তারা যেন এই সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করতে না পারেন, সেজন্য মৃত্যুর আগে তিনি রামকুমার রায় শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ এস্টেটের পক্ষে পারিবারিক দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে উইল করে দেন। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে এর দেখভালের দায়িত্ব দেন তার তিন ছেলে- রাজেন্দ্র রায় পুরকায়স্থ, রবীন্দ্র রায় পুরকাস্থ এবং রণেন্দ্র রায় পুরকায়স্থের ওপর। বংশ পরম্পরায় তাদের উত্তরাধিকাররা এসব সম্পত্তি দেখভাল ও ভোগ দখল করছেন।

রাজেন্দ্র রায় পুরকায়স্থ এবং রণেন্দ্র রায় পুরকায়স্থের দুই ছেলে বর্তমানে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। অন্যদিকে রবীন্দ্র রায় পুরকায়স্থের তিন ছেলের উত্তরাধিকাররা অন্যত্র বসবাস করেন। এদের মধ্যে রমাকান্ত রায় পুরকায়স্থ মারা গেছেন। তার একমাত্র ছেলে রণিজৎ কুমার রায় এখন উত্তরাধিকার। রবীন্দ্র রায়ের অন্য দুই ছেলের মধ্যে রাধাকান্ত পুরকায়স্থ ঢাকা এবং শ্যামাকান্ত রায় পুরকায়স্থ থাকেন সিলেট শহরে। জমিদার বাড়ির উত্তরাধিকাররা দাবি করেন, রাধাকান্তের নামে ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে লাল মিয়া ক্রয়সূত্রে মালিকানা দাবি করে ওই ভূমিতে টিনের ঘর নির্মাণ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে লাল মিয়া সমকালকে বলেন, আমার প্রবাসী শ্যালকরা আমমোক্তার বলে পানিধার গ্রামের আছার উদ্দিনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে নয় শতক ভূমি ক্রয় করেছে। তাদের ক্রয় করা ভূমিতে টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ সম্পর্কে বড়লেখা থানায় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি কেনা-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট থানার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া হয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাধাকান্ত রায় দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশয়ী। অনেক দিন ধরে তার স্বাভাবিক জ্ঞান বা চলাফেরা করার শারীরিক সক্ষমতা নেই। ফলে আমমোক্তারনামাটি একেবারে ভুয়া বলে দাবি করেছে তার পরিবার। আমমোক্তারনামা যে ভুয়া তা জানিয়ে গত ৩০ মার্চ রাজধানীর রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন রাধাকান্তের ছেলে রাজীব পুরকায়স্থ। জিডিতে উলেল্গখ করা হয়, লাল মিয়া ভুয়া কাগজ তৈরি করেছেন। তিনি এ বিষয়ে লাল মিয়ার কাছে জানতে চাওয়ার পর থেকে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আর আমমোক্তারনামাটি তৈরি করা হয় ঢাকার তোপখানা রোড থেকে। এই আমমোক্তার মূলে স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে একটি দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। যেখানে রাধাকান্ত জমিদার বাড়িতে স্থাপিত মন্দির, শ্মশান ও ভিটাবাড়ি দেখাশোনের দায়িত্ব লাল মিয়ার ওপর দিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। যে সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের কোনো সুযোগই নেই এবং অনেক উত্তরাধিকার থাকার পরও শয্যাশয়ী রাধাকান্ত রায়ের ভুয়া আমমোক্তারনামার ওপর ভিত্তি করে কীভাবে এ দলিল করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-রেজিস্ট্রার রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, আমি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে বড়লেখা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগদান করেছি। এই সময়ে এ ধরনের দলিল কিংবা আমমোক্তার রেজিস্ট্রি সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই।

জানা গেছে, ওই বাড়িতে বসবাসকারী রুদ্র রায় পুরকায়স্থ (ভোলা বাবু) ও অরবিন্দ্র রায় পুরকায়স্থ (রুপক বাবু) বিভিন্ন সময় বড়লেখা থানা ও স্থানীয়দের শরণাপন্ন হন। তবে লাল মিয়ার ভয়ে এখন আর কেউ মুখ খুলছেন না। তাদের নামে থাকা জমি লাল মিয়ার নামে বুঝিয়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য বড় অঙ্কের টাকার অফার করা হচ্ছে তাদের। এভাবে ভিটাছাড়া করে প্রায় শতকোটি টাকা মূল্যের জমিদার বাড়িটি দখল করাই এ চক্রের লক্ষ্য।


No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।