বাংলাভাষা বিশ্বায়নে ইসকনের অবদান - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

বাংলাভাষা বিশ্বায়নে ইসকনের অবদান


 

লেখক: অক্ষয়লীলা মাধব দাস

পৃথিবীতে বর্তমানে প্রচলিত সহস্রাধিক ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম প্রাচীন ও সমৃদ্ধ একটি ভাষা। বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনগণের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য পৃথিবীতে একমাত্র বাঙালিদেরই প্রাণ বিসর্জনের ইতিহাস রয়েছে। সেই রক্তাক্ত ইতিহাস স্মরণে প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়। অগণিত কবি-সাহিত্যিকের ক্ষুরধার লেখনীতে বাংলা ভাষার সাহিত্য ভাণ্ডারও অত্যন্ত সমৃদ্ধ।


বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র প্রেমধর্মের প্রচারক ও সমাজ সংস্কারক শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩খ্রি.)। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভক্তভাব অঙ্গীকার করে বঙ্গভূমিতে আর্বিভূত হন। সমাজ যখন জাতিভেদ, বর্ণভেদ প্রথার কষাঘাতে জর্জরিত, তখন বৈদিক সাম্যবাদের বাণী প্রচার করে তিনি এক বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথ প্রদর্শন করেন। তাঁর প্রচারিত বৈষ্ণবদর্শন সমাজে অহিংসা, প্রেম, মৈত্রী, সাম্য ও শান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করে। তাঁর অমিয় চরিতগাঁথা সকলকে এমনভাবে আকৃষ্ট করে যে, বাংলা সাহিত্যে তাঁকে নিয়ে এক নবযুগের সূচনা হয়, যা ‘চৈতন্যযুগ’ (১৫০০-১৭০০ খ্রি.) নামে প্রসিদ্ধ। তাঁকে কেন্দ্র করেই শ্রীলোচন দাস ঠাকুর কর্তৃক রচিত হয়েছিল ‘চৈতন্যমঙ্গল’ নামে বাংলা সাহিত্যের প্রথম জীবনীগ্রন্থ। এরপর একে একে মুরারীগুপ্তের কড়চা, বৃন্দাবন দাস ঠাকুর রচিত শ্রীচৈতন্যভাগবত, নরহরি সরকার ঠাকুরের শ্রীভক্তিরত্নাকর, নরোত্তম দাস ঠাকুর বিরচিত বাংলা গীতাবলিসহ অন্যান্য বৈষ্ণবকবিগণের রচিত বিভিন্ন পদ্যাবলি ও ভক্তিগীতি। চৈতন্যদেব সম্পর্কিত যত গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী কর্তৃক রচিত ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থটি বিশেষ সমাদৃত এবং তা বাংলা সহিত্যের জীবনীগ্রন্থগুলোর অন্যতম।


শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন- “পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম। সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম॥”। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এই বাণীর সার্থক রূপকার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি সন্ন্যাসী। বাঙালির সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে তিনি বিশে^র দরবারে তুলে ধরেছেন। শ্রীল প্রভুপাদ ৭০ বছর বয়সে বিশ্বব্যাপী মহাপ্রভুর দর্শন প্রচারের নিমিত্তে আমেরিকায় পাড়ি জমান। 

সেখানেই এক নতুন আধ্যাত্মিক বিপ্লবের শুভারম্ভ হয়, যার মূল উপকরণ ছিল শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, শ্রীমদ্ভাগবত ও শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের দর্শন। শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীচৈতন্যদেবের দর্শন ও তাঁর জীবনী গ্রন্থ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। শ্রীল প্রভুপাদের অনূদিত এই গ্রন্থ বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষার এক বিপ্লব সৃষ্টি করে। বর্তমানে পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই বললেই চলে যেখানে শ্রীচৈতন্যদেবের আদর্শ ও শিক্ষা প্রচারিত হচ্ছে না।  শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের পদ্যসুধা আস্বাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভাষার মানুষ বাংলা ভাষা শিক্ষার অনুশীলন করতে শুরু করছে। বাংলায় মহাপ্রভুর শিক্ষা ও অপ্রাকৃত জীবনদর্শন উপলব্ধি করে তারা তাদের জীবনধারা পরিবর্তন করছে।


শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক ইংরেজি অনুবাদের পরবর্তীকালে তাঁর শিষ্যগণ জার্মান, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ানসহ বিভিন্ন ভাষায় বাংলা সাহিত্যের অনন্য কীর্তি শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতের অনুবাদ করেন। শুধু শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতই নয়, মহাপ্রভুর জীবনাদর্শ নিয়ে রচিত অন্যান্য গ্রন্থ এবং শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের গ্রন্থাবলিসহ অসংখ্য বাংলা গ্রন্থ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। বাংলা ভাষার এত সমৃদ্ধ সাহিত্যভাণ্ডার বিশ্ববাসীকে এমন বিমুগ্ধ করেছে, যার ফলে তারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে ও বাংলা ভাষা অনুশীলন করছে।


বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছয়শোরও অধিক ইস্কন মন্দিরে সকাল-সন্ধ্যা আরতি-কীর্তনসমূহ বাংলা ভাষায় গাওয়া হয়। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ নির্বিশেষে সকলেই সেই কীর্তন গাইছে, আনন্দে নৃত্য করছে ও বাংলায় বিরচিত ভজন ও গ্রন্থাবলি থেকে পাঠ করে তা শ্রবণ করছে। এভাবে প্রতিনিয়ত তারা বাংলা ভাষার ব্যবহার করছে। তাই বাংলা ভাষা আজ বিশ্বজুড়ে সগৌরবে স্বমহিমায় বিরাজ করছে। 


২০১৫ সালে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শ্রীল প্রভুপাদের পাশ্চাত্য যাত্রার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশ্বের ১০৫টি দেশের ভক্তবৃন্দ সমবেতভাবে বৈষ্ণবকবি নরোত্তম দাস ঠাকুর কর্তৃক বাংলা ভাষায় রচিত গুরুবন্দনা ‘শ্রীগুরুচরণপদ্ম’ পরিবেশন করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ স্থান করে নেয়। বাংলা ভাষার বিশ্বায়নে ইস্কনের এই উদ্যোগ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ভাষা ও সংস্কৃতি একটি জাতির অস্তিত্বের সাথে সম্পৃক্ত। বাংলা ভাষা এমনই এক ভাষা, যে ভাষা বহু কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক ও লেখকের লেখনীতে সমৃদ্ধ হয়েছে। বাঙালি জাতির এ এক অনন্য সৌভাগ্য যে, পরমেশ্বর শ্রীচৈতন্যদেব এই বঙ্গভূমিতে জন্মগ্রহণ করে বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির গরিমা বৃদ্ধি করেছেন। আজ তারই দর্শন শ্রীল প্রভুপাদ কর্তৃক প্রচারিত হয়েছে। যার কারণে আজ বাংলা ভাষা পৃথিবীব্যাপী অগণিত মানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষার মহিমা আরো ছড়িয়ে পড়ুক এই হোক আমাদের প্রত্যাশা।- হরেকৃষ্ণ

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।