ভগবান শ্রী রাম বলেছিলেন, একজন সন্ন্যাসীর থেকে ভালো রাজা কেউ হতে পারে না। কথাটির তাৎপর্য এই যে, সন্ন্যাসীর মধ্যে না থাকে ক্ষমতার লোভ না থাকে আপনজন। সন্ন্যাসীর মধ্যে বৈরাগ্য ভাবনা থাকার কারণে তার দৃষ্টিতে সকলেই সমান হন। ফলস্বরূপ সন্ন্যাসী রাজা হলে তার রাজত্বে পরিবারবাদ টিকতে পারে না।
আর এই বিষয়টি অন্য দেশের মানুষ জানুক বা নাই জানুক, ভারতবর্ষের মানুষ ভালোভাবেই জানে। যদিও সন্ন্যাসী রাজা পাওয়ার সৌভাগ্য সবসময় হয়ে উঠে না। তবে সম্প্রতি ভারতজুড়ে সন্ন্যাসী রাজা পাওয়ার দাবি তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে যোগী মহারাজ আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পর থেকে এই দাবি আরো তীব্র হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বহুবার দেখা গেছে বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ যোগী আদিত্যনাথের মতো সন্ন্যাসীকে নিজের মুখ্যমন্ত্রী করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গও এর ব্যাতিক্রম নয়। পশ্চিমবঙ্গে এমন অনেক লোকজনকে দেখা যায় যারা সন্ন্যাসীকে রাজা তথা শাসক হিসেবে পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই পরিপেক্ষিতে বাংলায় এক স্বামীজির নাম এখন রাজনৈতিক আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে।
বাংলায় যে স্বামীজীর নাম চর্চায় উঠে আসছে তিনি হলেন, রামকৃষ্ণ মিশনের স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ। ২০২১ নির্বাচনে বিজেপি জয়ী হলে যোগী কৃপাকরানন্দ মহারাজ মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেবন বলে চর্চা শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বহু হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে। বঙ্গবিজেপির প্রধান মুখ নিয়ে এমনিতেই বেশ চর্চা চলে। যদিও এখনও রাজ্যে সেভাবে কোনো ব্যক্তিত্ব বড়ো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এমন অবস্থায় এক সন্ন্যাসীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করলে রাজনৈতিক ভোল বদলে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারত সেবাআশ্রম সংঘের কার্তিক মহারাজের নামও চর্চায় উঠে আসছে।
লক্ষণীয় বিষয় যে, স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজের বর্তমান থেকে অতীত পুরোটাই বেশ আকর্ষণীয়। মাধ্যমিকে বাংলায় পঞ্চম স্থান, উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম এবং মেডিক্যাল জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ১৭ তম স্থান দখল করে তাক লাগিয়ে ছিলেন। NRS মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করে দিল্লির AIMS থেকে এমডি করেন। এরপর আমেরিকায় যান হার্ট বিষয়ে গবেষনার জন্য। গবেষণার সময় থেকে বেশকিছু সময় দেখা মেলেনি উনার, এরপর দেবতোষ চক্রবর্তীকে দেখা যায় সন্ন্যাসী রূপে বেলুড় মঠে।
তবে রামকৃষ্ণ মিশন যেহেতু নিজেদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখেন সেই হিসেবে স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজকে আগামী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখা কতটা সঠিক তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমনিতেই স্বামী কৃপাকরানন্দ মহারাজ এক ইন্টারভিউতে রাজনীতিতে না আসার কথা বলেছিলেন। তবে কালচক্র কখন কাকে দায়িত্ব দেয় তা বলা মুশকিল।
অবশ্য এটা বাস্তব যে প্রতিভায় পরিপূর্ণ, বক্তব্যে সুদক্ষ কৃপাকরানন্দ মহারাজের ছবি বাংলায় হিন্দুত্ব ও উন্নয়নের ভাবধারা দুটোই বজায় রাখতে সক্ষম। এছাড়াও ঘরে ঘরে বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের ছবি রাখা বাঙালি হিন্দু সমাজ এক স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রানিত সন্ন্যাসীকে শাসক হিসেবে নিশ্চিত মেনে নেবে তাও স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, এর আগে সৌরভ গাঙ্গুলির নামও রাজনৈতিক মহলে বেশ চর্চায় ছিল। তবে ২০২১ এগিয়ে আসতেই এই ধরনের আলোচনা আরো তীব্র হবে এবং বাস্তব একমাত্র ভবিষ্যতেই দেখতে পাওয়া যাবে।
No comments:
Post a Comment