
মথুরার কেন্দ্রমণি কেশব দেব মন্দিরটি। এ মন্দিরকে অনেকে কেশব দেও মন্দিরও বলে থাকে।ধারনা করা হয় এখানে কংসের কারাগার ছিল যেখানে দেবকি ও বসুদেব বন্দী ছিলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়। পৌরাণিক কাহিনী মতে এই স্থানে সর্বপ্রথম মন্দির নির্মাণ করেন শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র শ্রীবজ্রনাভ । পাথরে খোদিত ব্রাহ্মীলিপি থেকেও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়াযায় ।
মন্দিরটি গজনির সুলতান মাহমুদ ১০১৭ সালে এটি ধ্বংস করে দেন। ১২৫০ সালে মহারাজ বিজয় পালের গড়া এ মন্দিরটি আবারও ধ্বংস হয় সিকান্দার লোদির হাতে। রাজা বীরসিং দেও এই মন্দিরটি আবার গড়ে তোলেন। ১৬৬৯ সালে এই মন্দির ধ্বংস করে দেন মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব।।আলেকজান্ডারের শাসনামলে আলেকজান্ডার ভারতবর্ষে এসে বেদি মন্দিরটি সম্পূর্ণ না ভেঙ্গে প্রার্থণা হলটি ভেঙ্গে দেন । মন্দিরের বেদি তখন রক্ষা পেলেও মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব গোবিন্দদেব মন্দিরটি ভেঙ্গে আর্বিভাব স্থান মন্দিরের এক অংশে ঈদগাহ্ মস্জিদ নির্মাণ করেন । সেই মন্দির ও মসজিদ এখনও পাশাপাশি রয়েছে যা সনাতন ধর্মের পরধর্ম সহিষ্ণুতার এক নিদর্শন । সেই মন্দির ও মসজিদ এখনও পাশাপাশি দর্শনীয় ।
এই স্থানে নির্মিত হওয়া প্রাচীন মন্দিরের বর্ণনা সমগ্র গ্রন্থ বা লিপি রয়েছে । যেমন - ১০১৭ সালে মুহম্মদ গজনবীর লিখিত রের্কড থেকে বহু তথ্য জানা যায় । তিনি লিখেছিলেন , "শহরের প্রান্তে অবস্থিত অভূতপূর্ব মন্দির নিশ্চয়ই কোন মানুষ নির্মাণ করেননি । এটি নিশ্চয় (দেবতারা বা ফেরেস্তারা ) নির্মাণ করেছেন ।" লাল পাথরের জুমা মসজিদ, বিশালাকার মন্দির পাশাপাশি। মন্দিরের সিলিং ও দেয়ালে দেখএ যাবে এখনো ক্ষত বিক্ষত হিন্দুপুরাণের নানান আখ্যান।
তৃতীয়বার এ মন্দিরটি তৈরি করেন রাজা বিজয় পাল। অর্চির রাজা জুদেব বুন্দলে একাই তৈরি করেন চার বার এই মন্দিরটি ।তিনি প্রমান করার চেষ্টা করেন, ধ্বংস নয় সৃষ্টির ভিতরেই মহত্ত্ব। শেষ বারের মত মন্দিরটি পুন নির্মাণ শুরু করেন কাশীর রাজা পণ্ডিত মদন মোহন মালভিয়া ১৯৪৪ সালে এবং ব্যাবসায়ি যুগল কিশোর বিড়লা ১৯৫১ সাল থেকে কাজ করে ১৯৬৫ সাল নাগাদ ১৫ মিলিয়ন রুপি ব্যয় করে নির্মাণ শেষ করেন।
মথুরা দেখার পর যেতে পারেন বৃন্দাবনের দিকে। পুরাণে বর্ণিত আছে, অসুরদের বিনাশ করে পৃথিবীতে প্রেম-ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। যদিও তার মনুষ্যরূপ আর সেই রূপে তিনি আবদ্ধ, তবু প্রকৃতপক্ষে তিনি অসীম ও সর্ববিরাজমান।
মথুরা-বৃন্দাবন সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
_________________________________
আগ্রা থেকে দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায় যমুনা তীরের বিখ্যাত এই যুগল তীর্থক্ষেত্র মথুরা ও বৃন্দাবন। আগ্রা থেকে মথুরা ৫৪ কিলোমিটার। সেখান থেকে বৃন্দাবন ১০ কিলোমিটার দূরে। আগ্রার বিজলিঘর বাসস্ট্যান্ড থেকে মথুরার বাস ছাড়ে। আবার আগ্রার ঈদগাহ থেকে মথুরাগামী বাসগুলো শহরের মধ্যে না গিয়ে নামিয়ে দেবে বাইপাস ক্রসিংয়ে। সেখান থেকে অটো পাবেন ৬ কিলোমিটার দূরে মথুরা শহরে যাওয়ার জন্য। আবার আগ্রা থেকে খুব সকালের দিকে রওনা দিয়ে মথুরা-বৃন্দাবন বেড়িয়ে রাতে আগ্রা ফিরে আসা যায় সহজেই।
মথুরায় প্রথমেই যাবেন শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি মন্দিরে। বিশাল এই মন্দিরে ক্যামেরা, মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। এখানেই রয়েছে কংসের কারাগার, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মথুরার পুরনো মহল্লায় দ্বারকাধীশ মন্দির। এর কাছেই রয়েছে যমুনা নদীতীরের বিখ্যাত অসিকুণ্ড ঘাট, বিশ্রাম ঘাট। নদীতে নৌবিহার ও ঘাট দর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। মথুরা-বৃন্দাবনের সব মন্দিরই দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে।
No comments:
Post a Comment