রাধাকৃষ্ণ লীলা নিয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব করেন - কেউ বলে রাধা নামে কেউ নেই, আবার কেউ বলে রাধারাণীর কাহিনী কাল্পনিক >তাহলে আসুন জেনে নিই।
রাধা নিয়ে সাধারণত দুইটি মন্তব্য ফেসবুকে আসে
(এক)- রাধার কোন জন্ম বৃত্তান্ত নেই
(দুই )- রাধা কাহিনী কাল্পনিক
উত্তর হলো:- রাধার ব্যাপারে জানতে হলে আমাদেরকে একটু পেছনে যেতে হবে ত্রেতাযুগে। আজ হতে দশহাজার আটশো বছর আগে ত্রেতাযুগে নাগলোকে নাগরাজের কন্যার নাম ছিল চন্দ্রসেনা,সেই চন্দ্রসেনা মনে প্রাণে ভালোবাসতেন দশরথ নন্দন রামকে, এমনকী সে রামকে তার প্রাণপতি মেনে নিয়ে ছিল। অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই পাতালপতি ছিলেন, দশানন রাবণ এই দুই ভাইকে পাতালে প্রতিষ্ঠিত করে ত্রিলোকে রাবণের আধিপত্য টিকিয়ে রাখার জন্য। একদিন অহিরাবণ ও মহিরাবণ নাগলোকে আক্রমণ করে নিজেদের আধিপত্য স্থাপন করার জন্য এবং তারা নাগলোক জয় করে,তখন অহিরাবণ সেখানে চন্দ্রসেনাকে দেখে, আর চন্দ্রসেনার রুপে মোহিত হয়ে অহিরাবণ চন্দ্রসেনাকে হরণ করে পাতাল পুরীতে নিয়ে আসে, কিন্তু চন্দ্রসেনা পাতাল পুরীতেও রামের প্রেমের নামে মালা গলায় দিয়ে রামনাম জপ করে। তা দেখে অহিরাবণ বলে হরণকৃত নারীর পতি হলো হরণকারী অর্থাৎ আমি, কিন্তু চন্দ্রসেনা বলে আমার তণ মন ও ঈশ্বর একমাত্র প্রভু রাম। এমন সময় লংকা থেকে রাবণের বার্তা আসে আর অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই লংকার উদ্দেশ্য প্রস্থান করে। রাবণ এই দুই ভাইকে বলে সাগরের ওপারে রাম নামে এক ভিকারী লংকায় আসার চেষ্টায় আছে তোমরা গিয়ে তাদের কে বধ কর। অহিরাবণ ও মহিরাবণ দুই ভাই গিয়ে বানরের বেশে রাম ও লক্ষ্মণ কে অজ্ঞান করে পাতাল পুরীতে নিয়ে এসে বন্দি করে রাখে পাতাল দেবীর মন্দিরে। তারা দুই ভাই মনস্থির করে যে আগামী পূর্ণিমাতে এইদুই জনকে পাতাল দেবীর কাছে বলি দিয়ে দেবী হইতে আরো শক্তি আহোরণ করবো। অন্য দিকে হনুমান ও অন্য সবাই দেখে যে প্রভুর কক্ষে প্রভু ও ভ্রাতা লক্ষ্মণ নেই এবং কক্ষেই একটি পাতাল সুরংগ, অতঃপর হনুমান আর দেরি নাকরে সেই সুরংগ দিয়ে পাতালে প্রবেশ করে। হনুমান পাতাল পুরীতে এসে দেখে এক রমনী তার দাসীকে বলছে পাতাল দেবীর মন্দিরে গিয়ে রাম ও লক্ষ্মণকে অশুদ্ধ করার জন্য, যাতে পাতাল পতিরা কাল পূর্ণিমাই রাম ও লক্ষ্মণের বলি দিতে না পারে। হনুমান তখনই দাসীর পিছনে পিছনে গিয়ে প্রভু ও লক্ষ্মণকে উদ্ধার করে । জ্ঞান ফিরে রাম বলেন অহিরাবণ ও মহিরাবণ এই দুই ভাইকে বধ ব্যতীত আমরা পাতাল পুরী থেকে যাওয়া অসম্ভব, হেনক্ষণে দুই পাতাল পতি এসে হাজির। তখন রাম যুদ্ধের আহ্বান করে, অহিরাবণ ও মহিরাবণ, রাম ও লক্ষ্মণের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পজ্জায় রাম একে একে পাঁচবার দুই ভাইকে বধ করে কিন্তু অতঃপর তারা জীবিত হয়ে যাই। হনুমান দেখে চিন্তা করে এরা কি অমর আর যদি নাহয় তাহলে এদের মৃত্যুর রহস্য কি?অতঃপর হনুমানের মনে পড়ল রমনীর কথা, তত্ক্ষণাত্ হনুমান প্রাসাদে গিয়ে চন্দ্রসেনাকে বলে মাতা, এইদুটি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি জানেন যদি জেনে থাকেন তাহলে বলেন? চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলে হে জানি কিন্তু কেন বলবো তাতে আমার কি লাভ?হনুমান বলেন বলুন আপনার কি চাই?চন্দ্রসেনা হনুমানকে বলে তুমি তোমার প্রভুকে যুদ্ধ শেষে আমার কাছে নিয়ে আসবে। হনুমান প্রশ্ন করে কেন? চন্দ্রসেনা বলে আমি দীর্ঘকাল থেকে রামের নামের প্রতি মোহিত হয়ে উনাকে অর্জনের উদ্দেশ্যে আরাধনা করছি উনি আমার আরাধ্য। তখন হনুমান চিন্তা করলো প্রভুতো সীতাপতি, তাহলে এ কিভাবে সম্ভব? আর যদি সত্যি প্রকাশ করি তাহলে পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য কি তা জানা অসম্ভব হবে। অতএব হনুমান বললো ঠিক আছে আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি প্রভুকে নিয়ে আসবো এবার বলুন। তখন চন্দ্রসেনা বলে সঞ্জিবীনি ভ্রমর অমৃত এনে ওদের ক্ষতস্থানে দিলে ওরা প্রাণ ফিরে পাই,যদি ঐ সঞ্জিবীনি ভ্রমর কে রুখতে পারো তাহলে ওদের মৃত্যু হবে।হনুমান বুদ্ধি করে বললো, ঠিক আছে মাতা আমি আসি আর একটি কথা প্রভু আসলে যাতে প্রভুর কোন প্রকার অপমান না হয় তাহলে কিন্তু প্রভু চলে যাবে তখন আমায় কোন দোষ দিতে পারবেন না। অতঃপর হনুমান গিয়ে সঞ্জিবীনি ভ্রমরদের অমৃত নিয়ে আসার পথে ধরে হত্যা করতে লাগলো। ভ্রমর কর্তা বলে উঠে আমাদের কেন হত্যা করছেন? হনুমান বলেন দুই অসুর পাতাল পতির প্রাণ রক্ষা করছেন এইজন্য। তখন ভ্রমর বলে ঠিক আছে আমাদের হত্যা করিওনা আমরা আর ওদের(অহিরাবণ ও মহিরাবণ)প্রাণ রক্ষা করবো না, এবার আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দাও। হনুমান বলে ঠিক আছে কিন্তু একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ভ্রমর বলে কি প্রতিশ্রুতি? তোমরা চন্দ্রসেনার কক্ষে গিয়ে তার শয়ন সজ্জার কাঠ ঘোগলা করে দিতে হবে। ভ্রমর বলেন ঠিক আছে। এরপর অহিরাবণ ও মহিরাবণ মারা যায়। তখন রাম হনুমানকে বলে চলো যাওয়া যাক,হনুমান বলে না প্রভু আপনাকে চন্দ্রসেনার কক্ষে যেতে হবে কারণ আমি পাতাল পতির মৃত্যুর রহস্য জানতে গিয়ে তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আপনাকে তার কক্ষে নিয়ে যাবে। হনুমান রামকে বিস্তারিত ভাবে সব খুলে বলে। অতঃপর রাম চন্দ্রসেনার কক্ষে যাই। রামকে দেখে চন্দ্রসেনা রামের চরণে পুস্পাদি দিয়ে রামকে বলেন আসন গ্রহন করুন। রাম যখন চন্দ্রসেনার শয়নসজ্জায় বসে তখন শয়ন সজ্জা ভেঙে পড়ে, তত্ক্ষণাত্ রাম ক্রোধান্নিত হয়ে উঠে। অতঃপর চন্দ্রসেনা রামের পায়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, আর বলতে থাকে আমি আমার এই অসুচী দেহ আমার আরাধ্যকে সমর্পণ করতে যাচ্ছিলাম আমার আরাধনা সব বৃথা। রাম তখন চন্দ্রসেনাকে তুলে বলে, দেবী আমি তোমার প্রেম ভক্তিতে প্রসন্ন আমার কোন ভক্তের আরাধনা বৃথা যায় না। কিন্তু এই জন্মে আমি তোমার ভক্তির প্রতিদান দিতে পারবোনা কারন আমি সীতাপতি, কিন্তু আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি দাপর যুগের লীলায় কৃষ্ণ হয়ে জন্ম নিবো আর তুমি রাধা নামে জন্ম নিবে আর সেই জন্মে আমি তোমার প্রেম ভক্তি আরাধনার প্রতিদান দিবো আর তোমার আমার সেই যুগলবন্দিকে মানবজাতি রাধাকৃষ্ণ যুগল বলে আখ্যায়িত করবে যা পৃথিবীর অন্তিম কাল পর্যন্ত অক্ষয় হয়ে থাকবে।
卐 এইটা হচ্ছে রাধারাণীর জন্ম বৃত্তান্ত যার উত্তর শ্রীমদ ভাগবতে নেই। উত্তরটি আছে রামায়ণ গ্রন্থে।卐
আমি অতি সংক্ষেপে লিখেছি কারণ পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিতে গেলে আমার আরেকটা রামায়ণ লিখতে হবে। যদি কারও পূণাঙ্গ বর্ণনা জানতে ইচ্ছে করে তাহলে রামায়ণের রামের পাতাল বিজয় অধ্যায় পড়ে দেখবেন।
এবার আসি দাপরযুগে, রাধাকৃষ্ণনের লীলা সবাই জানে সম্পূর্ণ কৃতী কথা ও কৃতিত্ব সবার মুখস্থ, তাই নতুন করে আমার বলার কিছু নেই। রাধারাণীর কাহিনী যারা কাল্পনিক বলে তাদের জন্য কিছু প্রমান দিতে পারি। যেমন :- (1)শ্রীমদ ভাগবতের দশম স্কন্ধের আটত্রিশ তম অধ্যায় যা সম্পূর্ণ (রাধা হতে বিদায় ও রাধার বিরহ বিলাপ) (2)রাধা অষ্টমী অধ্যায় (3)রাধার মান ভঞ্জন (4) নৌকা বিলাস ও এছাড়া কিছু কিছু অংশে রাধাকৃষ্ণনের লীলা কথা উল্লেখ আছে।
卐রাধা কাহিনী যে কাল্পনিক আসা করি আমি সেটা ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি卐
আমি এখানে যে অধ্যায় ও স্কন্ধের নাম উল্লেখ করেছি তা আপনারা সংস্কৃত ভাগবতে ও বাংলা সংকলিত ভাগবতে পাবেন। প্রয়োজনে পড়ে দেখবেন রাধাকৃষ্ণনের জীবন লীলার প্রমাণ হাতেনাতে পাবেন।
বিঃদ্রঃ :- এখানে অনেক বানান ভুল হতে পারে মোবাইলে পরিপূর্ণতা পাচ্ছি না।
"ধন্যবাদ"
No comments:
Post a Comment