মৌলভী মেহবুব আলী কিভাবে পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য হলেন? - Voice Of Sanatan
Vedic Video!Subscribe To Get Latest Vedic TipsClick Here

সাম্প্রতিক খবর

Voice Of Sanatan

সত্যের সন্ধানে অনুসন্ধান

Post Top Ad

মৌলভী মেহবুব আলী কিভাবে পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য হলেন?








এই গল্প হচ্ছে ভারতের উওর প্রদেশের বাড়ুয়াত নামক কোন অঞ্চলের বাডি মসজিদের একজন বাঙ্গালী ঈমামের যার নাম মৌলভী মেহবুব আলী। এই গল্প কোন গল্প নয় চন্দ্র সুর্যের মতো সত্য ঘটনা।

মৌলভী মেহবুব আলী সাহেব ঈমাম হিসেবে কুরানের শিক্ষা অনুযায়ী বিশ্বসীদের দিক নির্দেশনা দিতেন। তিনি তার এলাকার হিন্দু মুসলীম সব প্রতিবেশীদের মাঝেই প্রিয়জন ভাজন ছিলেন। দেরীতে ঘুম থেকে ওঠার জন্য তিনি অনেককে মৃদু ভৎসর্না করতেন এই বলে যে যেখানে প্রানীকূলের সামান্য পাখী যারা মানুষের চাইতে অনেক কম উন্নত মানে হয়েও ভোর সকালে ঘুম থেকে ঊঠেই কিচির মচির করে সেখানে তুমি আশরাফুল মাখলুকাত হয়েও এখনো ঘুমোচ্ছো। "মুসলীমদের এখন উচিত মসজিদে থাকা আর হিন্দুদের উচিত তাদের সৃষ্টি কর্তাকে ধন্যবাদ দেয়া। তিনি মানুষকে জীবন দান করেছেন তাদের সময় নষ্ট করার জন্য নয়।"উত্তর প্রদেশের বাঘপাত জেলার বাডিয়াতে ঐ মসজিদকে ঘিরে যত প্রতিবেশী ছিল সবাই মৌলভীকে সম্মান শ্রদ্ধা করত।

এভাবেই অনেকগুলো বছর কেটে গেল। তিনি বেশ ধর্য্য ও নিষ্ঠার সাথেই তার দ্বায়িতগুলো পালন করছিলেন। ইসলামী শিক্ষার উপর তার ছিল স্নাতক ডিগ্রী যা তার জন্য এক বিশ্বস্ত বর্ম হিসেবেই কাজ করেছিল। তিনি পৃথিবীর অন্যন্যা মুসলীমদের মতো বিশ্বাস করতেন কুরানের সমস্ত উপদেশ ও আদেশগুলো স্বয়ং আল্লাহ্‌র। প্রত্যককে অবশ্যই তাদের নিজের জীবনকে কুরানের আলোকে চালিত করতে হবে এবং কুরানে সমস্ত নির্দেশগুলো মেনে চলতে হবে তাহলে কেউ আর ভূল করতে পারবে না। ১৯৮৩ সালে শীতকালে এই মিষ্টভাষী ভদ্র ইমামের সাথে গুরুকুল ইন্দ্রপ্রসাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান শিক্ষক শ্রী কৃষ্ণা পাল সিং এর সাক্ষাৎ হয়। যখন মৌলভী সাহেব কুরানের উপর উপস্থিত বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন শ্রী কৃষ্ণা পাল সিং হাসছিলেন এবং তারপরেই বললেন "মৌলভী সাহেব আপনি কি আমার গুরুকুল ইন্দ্রপ্রসাদের আতিথ্য গ্রহন করবেন?" মৌলভী সাহেব তার নেমতন্ন গ্রহন করলেন কারন তিনি বেশীর ভাগ বাঙ্গালীদের মত গোঁড়ামী মুক্ত ছিলেন। সন্ধ্যে বেলা তিনি গুরুকুলে পৌঁছান। তার নিমন্ত্রনকারী গুরুকুলের একটি ছিমছাম পরিস্কার পরিছন্ন কামরায় তার থাকার ব্যাবস্থা করলেন। মাগরিবে আযানের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তিনি অযু সেরে সেই কামরায় নামায আদায় করে কামরা থেকে বের হলেন। তিনি তখন দেখলেন গুরু, শিষ্য ও দর্শনার্থিরা বৈদ্যিক যোগাসন করছে আবার কেউ কেউ সান্ধ্যকৃত্য করছে।

পরে বৈদ্যিক বিষয়ের উপর বক্তৃতা দেয়া হলো ও খাবার পরিবেশন করা হলো। নামায পড়ার প্রস্তুতির পূর্বে তিনি কৃষ্ণা পাল সিং এর সাথে রাতের খাবার খেলেন। কৃষ্ণা পাল সিং মৌলভী সাহেবকে গুরুকুলের অনেকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাকে গুরুকুলের মন্ত্রী ধর্মবীর এবং সন্যাসী স্বামী শক্তিভিবেসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। "আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কি মৌলভী সাহেব?" সন্ন্যাসী প্রশ্ন করলেন। "মানুষ যেন শয়তানের ফাঁদে পা না দেয় সেজন্য তাকেসর্তক করা এবং সঠিক পথে চলার নেয়ামত বাতলে দেয়া।" উওরে মৌলভী সাহেব বললেন। " আমরাও একই কাজ করছি এবং প্রকৃত পক্ষে আমাদের আর্যদেরও একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। আপনার কি মনে হয়ে কেন আমরা এক সাথে কাজ করছি না?" স্বামীজী প্রশ্ন করলেন। উওরে মৌলভী সাহেব বললেন "আমি জানি না। আমাকে ভাবতে দিন।" তিনি পরেরদিন ভোর ৪টায় উঠলেন এবং যথারীতি তার নামায পড়লেন। ঘর থেকে বেরিয়েই তিনি দেখলেন ছাত্ররা শরীর চর্চা করছে। তিনি শিক্ষকদের সাথে দেখা করলেন। ইসলাম সহ আধ্যাত্মিকতার অনেক বিষয় নিয়ে তিনি তাদের সাথে আলোচনা করলেন। মৌলভী সাহেব ইসলাম ব্যতীত অন্যন্যা ধর্মের দর্শন গুলো চিন্তা করেননি এবগ তিনি উপসংহারে বললেন যে অন্যনা ধর্মের রীতিনীতি প্রথা যুক্ত করা ব্যাপারে কুরান কোন কিছুই বলেনি। " আমার জানা ছিল না আমার এই ছোট কুয়োর বাইরেও জগত আছে। স্বামী বিবেকানন্দ খুব সম্ভবত আমার মত লোকের কথা চিন্তা করে তিনি বলেছিলেন যে সমুদ্রের বিশালতা ব্যাঙ্গের মনের চাইতে অনেক বড়, যে ব্যাঙের চিন্তা ছোট্ট কুয়োর মধ্যেই সীমাবদ্ধ" -এতেই সমস্ত আর্যরা হেসে উঠলেন।

গুরুকুল ছেড়ে যাবার সময় শ্রী ধর্মবীর তাকে স্বামী দয়ানন্ন্দ স্বরসতীর "সত্য প্রকাশ" এর একটি উর্দু সংকলন তাকে দিলেন।মৌলভী সাহেব বাড়ুয়াত গামী বাসে বসে বইটির পাতা উল্টাতে লাগলেন তখন তার চোখে পড়ল চৌদ্দতম অধ্যায়টির উপর যার বিষয় বস্তু হচ্ছে কোরান। গেরুয়া কাপড়ে মোড়ানো এই রকম এক সন্ন্যাসী তাঁর পবিত্র গ্রন্থের আয়াত লিপবদ্ধ করেছেন দেখে তিনি দারুন বিষ্মিত হলেন। "আমার জীবনে সেদিন আমি প্রচন্ড এক ধাক্কা খেয়েছিলাম। বইটির উপর কাফের সন্যাসীর ছবি ছিল আর ভেতরে কুরানের আয়াত" স্বামী দয়ানন্দের এই গ্রন্থটি কুরান এবং এর দাবীগুলো নিয়ে আলোকপাত করেছেন আমাদের সনাতন বৈদ্যিক প্রথার আলোকে। গ্রন্থটি ভারতের প্রায় সব ভাষাতেই অনুবাদ করা হয়েছে। কুরানে লেখা আছে "যেখানেই তুমি ঘোর না কেন সেখানে আল্লাহ্‌র মুখ থাকবে (২:১০৯)" স্বামীজী "সত্য প্রকাশ" বইটিতে প্রশ্ন করেছেন " যদি এই কথাই সত্য হয়ে তাহলে মোহাম্মদ কেন কেবলার(মক্কার পবিত্র মসজিদ) দিকে যাত্রা করেছিলেন? এখন তর্কের খাতিরে বলা হলো তাকে সেটা করার আদেশ ছিল তাই তিনি সেটা করেছেন তাহলে এর প্রতিউত্তর আসবে তাকেতো যেকোন দিকে তার ইচ্ছে মত মুখ ঘুরাবার অনুমোতিও তো দেয়া হয়েছিল। এ বক্তব্য পরস্পর বিরোধী তাহলে কোনটাকে সত্য হিসেবে ধরে নেব। আবার যদি আল্লাহ্‌র মুখ থাকে তাহলে তিনি কেবল একই সময় এক দিকেই মুখ করে থাকতে পারবেন সব দিকে নয়।" "সত্য প্রকাশ" গ্রন্থে চৌদ্দতম অধ্যায়ে প্রায় ৩০,০০০ শব্দে বেদের আলোকে কুরানের সমস্ত দাবীগুলোকে গুড়িয়ে দিয়েছে এবং কোটি কোটি মুসলীমের পবিত্র গ্রন্থ কুরানের অধারাবাহিকতা,অতিরঞ্জন ও বৈজ্ঞানিক ভূলগুলোকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন সেই গেরু কাপড়ে ঢাকা সন্ন্যাসটি।

বইটি মৌলভী মেহবুব আলীর মনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছিল। তিনি বলেন " এই সকল প্রশ্নের কোন উওরই আমার কাছে ছিলনা।তাঁর যুক্তিগুলো কোন ভূলই আমি খুঁজে পাইনি। তাঁর প্রতিটি ক্ষুরধার যুক্তিগুলো আমার সমস্ত বিশ্বাসকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছিল। স্বামী দয়ানন্দ স্বরসতীর রচিত "সত্য প্রকাশ" অন্ধকারের আমার হাত ধরেছিল এবং অন্ধকার থেকে আমাকে আলোতে নিয়ে এসেছিল যে অন্ধকার আমার মনকে ঘিরে রেখেছিল" বইটি পড়ার সময় মৌলভী সাহেব কতগুলো প্রশ্ন ও সন্দেহের তালিকা তৈরী করলেন যা তার মনকে পীড়া দিচ্ছিল। সেই সন্দেহের প্রশ্নগুলো তিনি সেই সময়কার ২৫ জন মুফতিকে(Islamic Scholar)চিঠির মাধ্যমের জানিয়ে ছিলেন। কুরান যদি যর্থাত দিক নির্দেশনা হয় তাহলে অবশ্যই এই উওরগুলিও আসবে। " আমি তাদের সবাইকে অনুরোধ করে বলেছিলাম যে আমার অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন না তুলে আমার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন গুলির উত্তর দিয়ে আমার মনকে তৃপ্ত করবেন। আমি জানার জন্যই প্রশ্ন করেছি। " তিনি আরও বললেন "শুধু মাত্র সাতজন আমাকে চিঠির উওর দিয়ে বললেন যে তুমি এই সকল প্রশ্নের উওর আশা করতে পারি না কারন কুরানের সত্যতা ও প্রবিত্রতা নিয়ে প্রশ্ন করার মাত্রই তুমি আল্লাহ্‌ ও নবীজির চোখে ধর্ম ভ্রষ্ট হয়ে গেছো। " মৌলভী মেহবুব আলীর মনে যে সকল প্রশ্ন জেগে ছিল কোন মাওলানা বা কোন ইসলামিক বিশেষজ্ঞ তার কোন উওরই দিতে পারেনি। তারপরে আত্মার সন্ধানের জন্য তিনি বেদ সমগ্র অধ্যায়ন শুরু করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি ধর্মত্যাগী হবে। তিনি ইসলামকে ছেড়ে বৈদ্যিক ধর্ম সনাতনকে আলিঙ্গন করলেন। "১৯৮৩ সালে আমি শুদ্ধি নিয়েছি এবং আমার পূর্বপুরুষের ধর্মীয় ঐতিহ্য আমি ফিরে পাই বৈদ্যিক আর্যাবত হিসেবে" তিনি এখন আমাদের সনাতন ধর্মের একজন অত্যন্ত জ্ঞানী পন্ডিত যার নাম পন্ডিত মহেন্দ্রপাল আর্য।

গত ২৯ বছর ধরে তিনি অনেক পথহারা মুসলীমকে ঘরে ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি বলেন " আমি প্রধানত ইসলামিক স্কলারদের লক্ষ্য করি এবং এ যাবতকাল সফলতার সহিত প্রায় ১৫,০০০ কে ফিরিয়ে এনেছি বৈদ্যিক বিশ্বাসে। আমি মহাঋষী দয়ানন্দ স্বরসতী ও বেদের শিক্ষায় সুসজ্জিত যা যুক্তি সঙ্গত, মানবিক, সকল বিতর্কের উর্দ্ধে এবং অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ভাবে নির্ভূল।" হালের মুসলীমদের মাঝে জনপ্রিয় মৌলবাদী ওয়াহাবি প্রচারক জাকির নায়েককে তিনি ইসলামিক যেকোন বিষয় নিয়ে তার সাথে বিতর্ক (Debate) করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। " নায়েক নিজেকে Comparative Religions-এর একজন ছাত্র মনে করে এবং সবর্দা বেদ ও বেদ সাহিত্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি মুম্বাইয়ের ডুংরিতে সুসজ্জিত একটি অফিস দক্ষ কর্মচারীদের দ্বারা চালান এবং যার একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে সেসব অমুসলীম যাদের জ্ঞান একেবারেই কম তাদের Misleadকরা মানে ভূল পথে চালিত করে তাদের ধর্মান্তরিত করে মুসলীম বানানো "
একদা মৌলভী বর্তমানে বৈদ্যিক পন্ডিত বলেন হিন্দুরা এখন খুবই বিশৃংখল এবং কুসংস্কারে ডুবে আছে। যখন দুষ্টের দলেরা তাদের শঠ কৌশলের মাধ্যমে আমাদের আক্রমন করে তখনও তাদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। এখন সময় এসে গেছে জেগে উঠবার এবং সকল ভাই বোনদের বৈদ্যিক আশ্রয়ে ফিরে আসার সাদরের আমন্ত্রন জানার জন্য শুদ্ধিকে পুনর্জীবিত করতে হবে।"

এই মহৎ প্রানের বক্তব্য অনুযায়ী আমরা এতই বিশৃংখল যে এমন একজনকে আমরা খুবই কম সনাতনীরা চিনি বা জানি। অথচ এই রকম ব্যাক্তি অন্যের সম্প্রদায়ের থাকলে তাকে নিয়ে সবাই কতই না হৈ চৈ করত সেটা সামান্য জাকির নায়েককে নিয়ে মুসলীমদের লাফালাফি দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু আর নয়, আমরা তরুন প্রজন্ম এবার জেগে উঠবোই। বাংলার প্রতিটি ঘরে সত্যকে পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে আজকে আমাদের সনাতনের অঙ্গীকার।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

আপনার বিজ্ঞাপন দিন।